হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এরাবরাক নদীতে শুরু করা হয়েছে খাল পুনঃখনন প্রকল্প। নদীকে ২৯টি ভাগে ভাগ করে এই প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। ব্যয় দেখানো হয়েছে সোয়া ৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের বেডব্লক ও সাইনবোর্ড স্থাপন এবং বৃক্ষরোপণে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা।
এদিকে নদীকে খাল দেখানোর ঘটনায় নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে তারা নদী রক্ষার দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি এবং মৌলভীবাজার জেলার খলিলপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এরাবরাক নদী। এ নদীটি দুই জেলাকে বিভক্ত করেছে। শুকনো মৌসুমে পানি তেমন না থাকলেও বর্ষায় পূর্ণ যৌবন পায় নদীটি।
দু’জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর ওপর নির্মিত ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ হচ্ছে।
প্রকল্পের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, খরস্রোতা এ নদীকেই খাল দেখিয়ে ১০০ ফুট প্রস্থে সর্বনিম্ন ১১৬ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৪ মিটার দৈর্ঘ্য করে মোট ২৯টি প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৯ টাকা। খাল প্রকল্পের উপ-প্রকল্পের আওতায় বেডব্লক ও সাইনবোর্ড স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা।
অপর উপ-প্রকল্পের আওতায় বৃক্ষরোপণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৭ টাকা। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার ৩৬৫ মিটার। পুনঃখনন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (জাইকা-২)। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে এলজিএস কমিটি এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৩১টি চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল বা এলজিএস’কে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে ৩১ মে কাজটি শেষ করার মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন কাজ করছে একটি কুচক্রী মহল। যেকোনো মূল্যে নদীকে খালে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে চান তারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরবর্তী মানুষের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজের আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে এলজিএস কমিটি তৈরি করে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘একটি নদীকে খালে রূপান্তরিত করে ভুয়া নাম দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা সত্যিই ন্যক্কারজনক। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য পুরো নদীর এমন ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। এটা রীতিমতো নদীর প্রতি জুলুম ও নির্যাতন করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কাজী সাহেদ বিন জাফর বলেন, ‘সরকার প্রকল্পটি খাল হিসেবে দিয়েছে। আমরা শুধু সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করছি।’
স্বজনপ্রীতির অভিযোগটি স্বীকার করে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন বলেন, ‘পুরো ইউনিয়নেই আমার আত্মীয়স্বজন রয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের আত্মীয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীর প্রশস্ততা বেশি থাকায় পুরো অংশ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব ছিল না। তাই প্রকল্পের আওতায় আনতেই এটিকে খাল উল্লেখ করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে ১০০ ফুট খননের পর নির্দেশনা অনুযায়ী পাশেই রাখা হবে উত্তোলিত মাটি।’
সাড়ে ৩ বছর যাচাই-বাছাই করেও নদীকে কেন খাল দেখিয়ে প্রকল্প নেয়া হলো এমন প্রশ্নে হবিগঞ্জ ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. মাজহার ইবনে মোবারক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাছির বলেন, ‘প্রকল্পটি জনবান্ধব না হলে বা ডিজাইনে ভুল থাকলে সেটি সংশোধনে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হবে।’
নদী বন্দর / এমকে