বাণিজ্য সম্প্রসারণে রাঙামাটির সাজেক সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ এবং মিজোরাম।
রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়কমন্ত্রী ড. আর. লালথানক্লিয়ানার সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান।
তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বর্ডার হাট চালু আছে। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে আরো তিনটি বর্ডার হাট উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাজেক থেকে ৩০ মিনিট দূরত্বের মধ্যে মিজোরামের বর্ডারে যাওয়ার রাস্তাও ভালো। সেখানে বর্ডার হাট করার বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের ৩১৮ কিলোমিটারের যে বর্ডার কানেকশন রয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক যাতে উন্নত হয়, যাতে বাণিজ্যিক সুবিধা পায় সে প্রস্তাব দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চান যাদের সঙ্গে সীমানা রয়েছে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে। মিজোরাম নিজস্বভাবেই বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা আমাদের কয়েকটি ফ্যাক্টরি ভিজিট করেছেন। খুব শিগগিরই আমরা বর্ডারে যেতে চেষ্টা করব, আগামী মাসে মিজোরামে যেয়ে দেখে আসার চেষ্টা করব।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিজোরাম থেকে বাঁশ, সেগুন কাঠ, ফল, সিমেন্ট, পাথর আসে। আমাদের এখান থেকে ট্রয়লেট্রিজ, গার্মেন্টস, প্রাণের ফলের রস, মাংস, মাছ, ইলেক্ট্রনিকস, কুকিং অয়েল যাচ্ছে। বর্ডারের কানেকশন বাড়াতে পারলে বাণিজ্য আরো সম্প্রসারিত হবে। তারা একটি ব্রিজের কথা বলছে, সেটা করলে সোজাসুজি আসতে পারে। তারা কয়েকটি জায়গা দেখিয়েছে। রাঙামাটির কথা বলেছে, সেখানে গভীর নদী আছে, কিন্তু ভালো পথ নেই। সাজেকের যে বর্ডারের কথা বলেছে সেখানে ছোট খাল আছে, সেখানে ব্রিজ করলে চিটাগাং পোর্ট তারা ব্যবহার করতে পারবে, এটা তাদের স্বপ্ন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চান ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকুক। সাজেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা ভালো, সেখানে করা যায় কি না দেখতে আমি যাবো। আমরা সম্পর্কটা মিজোরামের সঙ্গে, চূড়ান্তভাবে ভারতের সঙ্গে বাড়াতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সাজেকের পথ দিয়ে রোড কানেকটিভিটি হতে পারে। অথবা নদীপথে ১৮-১৯ কিলোমিটার আসলে রাঙামাটি আসতে পারবে। তাহলে নদীপথ বা সড়ক পথে সেটি হতে পারে। এখন কিছু নেই বলে চোরাইপথে কাঠ আসে। মে মাসে ঘুরে এসে আমরা ব্যবসার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চাই। ৮০-৯০ মিটার ব্রিজটা করলে তাদের সিল্কসিটি এলাকায় সরাসরাসরি পৌঁছে যেতে পারব। মিজোরামের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার সরাসরি ক্ষমতা রয়েছে।’
মিজোরামের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলাম। গতকাল আমরা কয়েকটি ফ্যাক্টরি ভিজিট করেছি। প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট করেছি, যা খুবই দারুণ। আমরা চাই মিজোরামে কিছু ফ্যাক্টরি করতে। গার্মেন্টস প্রোডাক্ট দিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রসংশিত। তাদের আয়ের একটি বড় অংশ আসছে এখান থেকে। গার্মেন্টসের মাধ্যমে নারীদের কর্মক্ষেত্র তৈরিতে বিশাল জায়গা তৈরি করেছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘মিজরোম ভারতের মধ্যে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ রাজ্য। শিক্ষায় কেরালার পর মিজোরাম এগিয়ে রয়েছে। আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। করোনায় আমাদের মাত্র ১১ জন মারা গেছে, আমরা করোনা প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়েছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন- সাজেক থেকে কাছাকাছি যে বর্ডার রয়েছে সেখানে বর্ডার হাট করার বিষয়ে দেখতে। আগামী মাসে তিনি মিজোরামে আসবেন। আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩১৮ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের খুবই কাছের। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে খুবই আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিছু চুক্তি করেছি, যেগুলো ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। সুতরাং নতুন করে সেগুলো করলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমস্যা হওয়ার কথা না। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসাটা ইতোমধ্যে করছি।’
নদী বন্দর / পিকে