ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জসহ ৪৪টি রুটের পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো, বড় বড় মালবাহী শিপ, চলাচলে প্রধান নৌরুট হচ্ছে ফরিদপুরের সিএন্ডবিঘাট, হাজীগঞ্জ এবং হাজীবাড়িঘাট।
চট্টগ্রাম হতে চাঁদপুর এবং চাঁদপুর থেকে ফরিদপুর নগরবাড়ী, পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া ও আরিচাঘাটে নোঙরের অপেক্ষায় পণ্যবাহী বহু কার্গো জাহাজ, শিপ। উল্লিখিত জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ঢুকতে কমপক্ষে ১০৪টি ডুবো চরে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে সকল রুটের পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে অচল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরের।
মুন্সীগঞ্জ, মীরকাদিম, মাদারীপুরের মাওয়া কাওরাকান্দি, কাঁঠালবাড়িয়ার মাঝপদ্মা, মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল, শরীয়তপুরের কাচিকাঁটারচর, ঢাকার নবাবগঞ্জ, চরভদ্রাসনের কার্তিকপুর ঘাট, মেলেংঘাট এলাকায় কমপক্ষে ১০/১২টি পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ আটকে আছে বলে জানা গেছে। গত এক দেড় মাস ধরে মালবাহী জাহাজ ও কার্গোর পণ্য খালাশ করতে না পারায় লোকসানের বোঝা চেপে বসছে মহাজনদের কাঁধে এবং উল্লিখিত ঘাটগুলোতে পণ্যবাহী নৌযান ভিড়তে না পারায় মালামালও খালাশ হচ্ছে না। ফলে কমপক্ষে ৮ হাজার কুলি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। চলতি শুস্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে আবারও নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নৌবন্দরে ভীড়তে না পেরে অনেক দূরে দিঘিরচর, ভুঁইয়াবাড়িঘাট, খুশিরবাজার, বাইল্যাহাটা, হাজিগঞ্জেরচর, চরভদ্রাসনের এমপিডাঙ্গি ও গোপালপুরসহ বিভিন্নস্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে ১২ হাজার বস্তা সিমেন্ট আটে। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই নেই বলে ৮ হাজার আনতে হয়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সঙ্কটের কবলে পড়ে সিএন্ডবি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এই দূরাবস্থা চরমে পৌছেছে। বর্তমানে নাব্যতা সঙ্কট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বিআইডবিøউটিএ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করছে। তবে খননের কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বালু এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়ীক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌবন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৭ সালে সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছেনা।
এমবি পানামা নামে আরেকটি জাহাজের মাস্টার মো. ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সেখানে কোথাওবা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে।
ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান লাকি ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ৮ হাজার কুলি-শ্রমিক এই নৌবন্দরে কাজ করেন। অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও রয়েছেন। জাহাজ ও কার্গো না আসায় তারা কাজ পাচ্ছে না। তিনি জানান, বছরের ৫ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকে বলে বন্দরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।
ফরিদপুর বিআইডবিøউটিএর সংশ্লিষ্ট পোর্টঅফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেল ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনও নৌপথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই অবস্থার উন্নতি হবে।
নদী বন্দর / পিকে