দেশে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের অডিটোরিয়ামে আগামী ১ এপ্রিল থেকে এ প্রদর্শনী শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করছে আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।
বুধবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিসিসি অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি।
এ সময় প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম। প্রদর্শনীর পরিকল্পনা সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে সম্যক ধারণা দেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, করোনা মহামারির কারণে এবারের প্রদর্শনী সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এবারের ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’-এর মূল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যে কেউ বাসায় বসে মেলার স্টল ভিজিট করতে পারবেন। এবারের প্রদর্শনীর স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘মেইক হেয়ার, সেল এভরিহোয়্যার’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ কোনো স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা উল্লেখ করে পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আমরা সবাই ভোগ করছি। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করে আমরাও উন্নতির মহাসড়কে অগ্রসরমান। তিন দিনব্যাপী এই মেলা ভার্চুয়ালি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদর্শনীর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি জ্ঞানকে বাড়িয়ে নেয়ার জন্য নানা কর্মশালা/সেমিনারের আয়োজন করা হবে। থাকবে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। এবারের প্রদর্শনীতে দেশীয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পণ্য ভার্চুয়ালি প্রদর্শন করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিতে সক্ষমতা অর্জনে এখনকার তরুণরাই হবে ভবিষ্যৎ অগ্রদূত। উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমরা নিজেদের উন্নত দেশের বাসিন্দা হিসেবে শিগগিরই দাবি করতে পারব বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
পলক বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে সহায়ক হবে এ প্রদর্শনী।
‘দেশে সহজ ও বিনিয়োগ সহায়ক পলিসি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিনিয়োগ অবকাঠামো। ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রণোদনা সুবিধা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে হাই-টেক পার্ক, সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে বিনিয়োগ করার সুবিধা পাচ্ছেন। সরকার একই সঙ্গে এসব উদ্যোগের প্রচারের মাধ্যমে দেশ ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরার মাধ্যমে দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্যও সচেষ্ট রয়েছে। ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’ তেমনই একটি উদ্যোগ।’
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর অনেক দেশের রোল মডেল। প্রযুক্তির প্রদর্শনী নিজেদের সক্ষমতা প্রকাশ করে। দেশে এখন হাই-টেক পার্কের সফলতা দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে যশোরে ও চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, নাটোর ও রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ঢাকার জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘তরুণদের আইসিটিতে দক্ষতা বাড়াতে দেশের ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। সবগুলো হাই-টেক পার্ক চালু হয়ে গেলে জেলা/উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরাও প্রযুক্তির সুফল ঘরে বসে পাবে, সুফল প্রাপ্তি এখনি শুরু হয়ে গেছে। এক্সপো থেকে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ফোর-জি প্রযুক্তি ছাড়িয়ে পৃথিবী এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তির দিকে ধাবমান। দ্রুত বদলে যাওয়া প্রযুক্তি বিশ্বের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এই এক্সপো মাইলফলকের ভূমিকা রাখবে।’
আইডিয়া প্রকল্পের উপ-পরিচালক বলেন, এবারের প্রদর্শনীকে আমরা নিত্যনতুন উদ্ভাবন দিয়ে সাজিয়েছি। সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের সেরা উদ্ভাবনগুলো এখানে প্রদর্শন করা হবে। স্বনামধন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে। পৃথিবী জানবে ছোট এই দেশটিও প্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্সপোর নলেজ পার্টনার হিসেবে কাজ করছেন। যাদের কাছে আমাদের আশা-ভরসা, তারাই স্বপ্রণোদিতভাবে এই এক্সপোর অংশ।
এক্সপোর পরিকল্পনা তুলে ধরে বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি বরাবরের মতো তথ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে। এবারের আয়োজনে আমরা ভিন্নতা এনেছি। ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’-এর আয়োজক হিসেবে আমরা প্রদর্শনীকে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বিসিএস-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / এমকে