ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আহত অবস্থায় নিয়ে আসার পর গুলিবিদ্ধ দুজন মারা গেছেন। এছাড়া শনিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরুল আমিন নামের আরও একজন মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন-সরাইল উপজেলা সুফি আলীর ছেলে আল-আমিন (১৯) ও সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামের আলতাব আলীর ছেলে হাদিস মিয়া ওরফে কালন (২৩)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন।
এনিয়ে শুক্রবার (২৬ মার্চ) থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়াল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার হরতালের শুরুতে সকাল থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও মাদরাসাছাত্ররা বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে মাদরাসা ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা হাসপাতাল রোডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে ঢুকে হামলা করেন। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে মারধর করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন জানান, অতর্কিতভাবে প্রেসক্লাবে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর আক্রমণ করেন। তার মাথায় পাঁচটি সেলাই দেয়া হয়েছে।
এদিকে আজ সকালে শহরের দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের নতুন সময় ও আমাদের সময় ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফির ওপর হামলা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, শহরের জেলরোডে উপজেলা ভূমি অফিসে ফুলবাড়িয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের বাসভবন, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কুলে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বর, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, দক্ষিণ মৌড়াইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের বাড়ি ও সরকারপাড়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ব্যাংক এশিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও আনন্দময়ী কালি বাড়িতে হামলা করেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা প্রধান প্রধান সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, গাছ ও খুঁটি ফেলে অবরোধ করেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ছোড়ে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ১৫ জন জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, আজকের পরিস্থিতি আপনারা নিজেরাই দেখছেন। জনগণের জানমালের রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এসব তাণ্ডব চালাচ্ছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপি।
নদী বন্দর / জিকে