নোয়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ডালচর এলাকায় বরযাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ৪৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আটজন।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় নৌপুলিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন ।
তিনি বলেছেন, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে ঘটনার ৪৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ আটজনের কাউকে জীবিত বা মৃত উদ্ধারের কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নববধূ ,নারী ও শিশুসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনো আটজন নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজরা হলেন-জাকিয়া বেগম (৫৫), মো.হাছান (৭), নার্গিস বেগম (৪), হালিমা (৪), লামিয়া (৩), নিহা (১), আমির হোসেন ও আলিফ (১)।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হাতিয়ার নলের চরে বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে নববধূ নিয়ে বরসহ ভোলার মনপুরা যাওয়ার পথে ডালচর এলাকায় তীব্র স্রোতের মুখে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।
নিহতরা হলেন- হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের থানার হাট এলাকার ইব্রাহীম সওদাগরের মেয়ে নববধূ তাছলিমা (২০), হরণী ইউনিয়নের মোহম্মদপুর গ্রামের আক্তার হোসেনের মেয়ে আসমা বেগম (১৯), সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে আফরিনা আক্তার লামিয়া (৯), একই এলাকার আলমগীর হোসেনের মেয়ে লিলি আক্তার (৮), নলেরচরের কালাদুর গ্রামের ফয়জ্জুল্লার মেয়ে হোসনে আরা বেগম (৫), চানন্দী ইউনিয়নের পূর্ব আজিম নগর গ্রামের আলা উদ্দিনের স্ত্রী রাহেনা বেগম (৩০) ও একই এলাকার খোরশেদ আলমের স্ত্রী নুরজাহান (৬৫)।
নিহত নববধূর বাবা ইব্রাহীম সওদাগর জানান, হাতিয়ার ডালচরে ট্রলার ডুবির এ ঘটনা ঘটলেও প্রবল স্রোতে পাঁচটি লাশ ভেসে যায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে। জেলেরা নদীতে ভাসমান লাশগুলো ভাসতে দেখে তাদের উদ্ধার করে টাংকির ঘাটে নিয়ে আসেন। পরে তারা রামগতি থানা পুলিশকে খবর দেন। অপরদিকে দুটি লাশ পাওয়া যায় চানন্দি ঘাটে।
ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পরে অনেকে সাঁতার কেটে ও অন্য ট্রলারের সহযোগিতায় তীরে উঠতে সক্ষম হলেও শিশুসহ আটজন নিখোঁজ রয়েছেন।
ইব্রাহীম সওদাগর জানান, তার মেয়ে তাছলিমার সঙ্গে হাতিয়ার ঢালচরের বেলাল মেস্তুরীর ছেলে ফরিদ উদ্দিনের বিয়ে হয়। মঙ্গলবার তাছলিমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরের বাড়িতে নেয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নৌ-পুলিশের ইনচার্জ আকরাম উল্লাহ জানান, দুর্ঘটনার পরপরই হাতিয়ার নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযানে নামে। তবে সন্ধ্যা নেমে আসায় উদ্ধার অভিযান থেমে যায়। বুধবার সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি উদ্ধার করে হাতিয়ার ডালচরে রাখা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইমরান হোসেন বলেন, নিহত সাতজনের পরিবারকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও মৃতদেহ পাওয়া গেলে তাদেরকেও অনুরূপভাবে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।
হাতিয়া নলচিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকরাম উল্যা জানান, আজকেও আমরা নদীর বিভিন্নস্থানে তল্লাশি অভিযানে রয়েছি। তার আগের দিনও সারাদিন মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নদী বন্দর / পিকে