পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার প্রাকৃতিক পদ্ধতিকেই ‘পার্চিং’ বলা হয়। গাংনীতে ধানের খেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি। ধানি জমিতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পোঁতা হয়। সেগুলোর উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে।
এই পার্চিং পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত কম ব্যয়ের এবং পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কম হওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জেলার কৃষকদের মাঝে। অনেক কৃষক আমন ফসলের খেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার সাত হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
মহামারী করোনার মধ্যেও জেলার কৃষকরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। বর্তমানে তাদের রোপণকৃত ধানগাছগুলো বড় হচ্ছে। এখন সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠগুলো। আর এই ধানের গাছ কৃষকদের মনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি।
পার্চিং সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কৃষকরা তাদের আমন ফসলের খেতকে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা করেছেন।
এসব ব্যবহারে শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি খেতের পার্চিংয়ের উপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধান উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
গাংনীর শাহারবাটি গ্রামের ধানচাষি আরিফ হোসেন জানান, এবার তাদের জমিতে ধান এখন সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠেছে। তারা সম্পূর্ণ খেতে পার্চিং পদ্ধতি করেছেন। বিঘাপ্রতি আমন ধানের খেতে ৫টি গাছের ছোট ডাল, বাঁশের কঞ্চি এবং ৩টি জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দিয়েছেন।
ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলি ওই ডালে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকা ধরে খেয়ে ফেলছে। এতে তাদের জমিতে ভালো কাজ হচ্ছে। একই কথা জানালেন কৃষক আব্দুল হাসেম।
তিনি জানান, এ পদ্ধতির ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে তারা খুব উপকার পাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কেএম শাহাবুদ্দীন জানান, পোকা দমনে শুধুমাত্র কীটনাশকেই ভরসা করায় কৃষকদের উৎপাদনের খরচ একটু বেশি হয়। এখন পার্চিং পদ্ধতিতে কৃষকদের খরচ বহুলাংশে কমছে। এছাড়া এ পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছে। সেই সঙ্গে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমির উর্বরতা বাড়ছে।