ঝালকাঠি জেলায় এ বছর বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ১৫ হেক্টর, রাজাপুরে ২০ হেক্টর ও কাঁঠালিয়ার পাঁচ হেক্টর জমিতে। সবুজ-হলুদের সংমিশ্রণে চৈত্রের তাপে বাহারি মৌসুমী ফল বাঙ্গির সমারোহ।
প্রায় সাড়ে তিন মাস নিবিড় পরিচর্যার পর মাঠে মাঠে এখন চলছে বাঙ্গি ফল তোলার উৎসব। একদিকে খেত থেকে বাঙ্গি তুলতে চাষিদের চোখমুখে হাসির ঝিলিক অপরদিকে বিক্রি করতে গিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় গ্রামের চাষি হারুন সিকদার ও কামাল সিকদার বলেন, এ বছর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং পোকার উপদ্রব কম থাকায় বাঙ্গির লাভজনক উৎপাদন হয়েছে।
উৎপাদিত ফসল নিয়ে তারা আশায় বুক বাঁধলেও সুলভ মূল্যে বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা ভেবেছিলেন এ বছর লাভের মুখ দেখবেন। এনজিও থেকে আনা চড়া সুদের ঋণের বোঝাও সহজেই মেটাতে পারবেন। কিন্তু বিপাকে পড়েছেন করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সারাদেশের লকডাউনের কারণে।
এখন উৎপাদিত বাঙ্গির বাজার দর না পাওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত তারা। চাষি হারুন সিকদার (৪৫) জানান, আড়াই বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারলেও দ্রুত রফতানি এবং পরিবহন ব্যয় বাড়ায় খরচ পুষিয়ে অন্যত্র বিক্রি করতে পারেননি।
ফলে অনেক ফসল খেতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় বাজারে মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পেলেও দু’সপ্তাহের মধ্যে সে দাম দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। কয়েকদিন পূর্বে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের বাঙ্গির দাম ৮০-৯০ টাকা, মাঝারির দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং ছোটটির দাম ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার (৫এপ্রিল) থেকে সারাদেশে লক ডাউনের কারণে এখন স্থানীয় বাজারেও এ দাম পাওয়া যাচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিলো। পুরো চৈত্র ও বৈশাখ মাসজুড়ে কৃষদের ফসল তোলা আর বিক্রির মৌসুম।
কিন্তু যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকা ও মূল বিক্রির সময়টাতে লকডাউনে পতিত হওয়ায় এখন কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা। জমি তৈরি, সার প্রয়োগ, বীজ বপন ও পরিচর্যার সব কিছুতেই কৃষি বিভাগ পাশে থেকে সবধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ফজলুল হক বলেন, ‘বাঙ্গির বাম্পার ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। যে কোনো সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত। কৃষকরা একটু পরিশ্রমী হলে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে আরও বেশি সফল হতে পারে।’
নদী বন্দর / পিকে