তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে দশমিনা উপজেলার প্রায় কয়েক’শ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন। ক্রমাগত ভাঙনে প্রায় ৫ হাজার একর ফসলি জমি, ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১৬টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নে নদী ভাঙনের কবলে ভোলাইশিং, বেলচর, কালীর চর, চঙ্গার চর, চরতৈলক্ষ, চরভুপেন্দ্র, পাতার চরসহ সাতটি গ্রাম একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে রণগোপালদী ইউনিয়নের চরঘুনি, আউলিয়াপুর, দক্ষিণ রণগোপালদী, উত্তর রণগোপালদী, চরবোরহান ইউনিয়নের চরশাহজালাল, চরবোরহান, দশমিনা ইউনিয়নের হাজিরহাট, গোলখালী, কাটাখালী, চরহাদী, কাউয়ার চর, সৈয়দ জাফর ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়া গ্রাম, চরবাঁশবাড়ীয়া, চরসাইমুন, ঢনঢনিয়াসহ ১৬টি গ্রাম।
স্থানীয়দের মতে, তেঁতুলিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে অপরিকল্পিতভাবে বনায়ন করায় নদীর স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে দশমিনা উপজেলার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে ও গ্রীষ্মের শুরুতে উপজেলার তীরবর্তী এলাকা ভেঙে মূল ভূখণ্ডের আয়তন ক্রমেই কমছে। অপরদিকে নতুন নতুন চর জেগে উঠছে। নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারা পরিবারগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ২০১৯ সালের ১৫ জুন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক দশমিনার নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং তাত্ক্ষণিক দশমিনার হাজিরহাট নৌবন্দর রক্ষায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। বর্তমানে ঐ অংশে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চরবোরহান ইউপির চেয়ারম্যান মো. নজির আহম্মেদ সরদার জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নদী ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। প্রতিদিনই ফসলি জমিসহ ভেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দশমিনা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইকবাল মাহামুদ লিটন বলেন, নদী ভাঙনে ঘরবাড়িসহ, কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে কয়েক শ মানুষ এলাকা ছেড়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। খুব দ্রুত কর্তৃপক্ষ নদীর ভাঙন রোধ না করলে আমাদের উপজেলার মূল ভূখণ্ড ছোট হয়ে যাবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা জানান, ইতিপূর্বে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, দুই-চার মাসের মধ্যেই নদী ভাঙন রোধে পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে।
নদী বন্দর / পিকে