পাকিস্তানের লাহোরে পুলিশের অভিযানে অন্তত তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। দেশটির কট্টর ডানপন্থি দল ‘তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান’ (টিএলপি) সম্প্রতি ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে আসছে। তাদের সহিংস বিক্ষোভে পুলিশের অন্তত দুই কর্মকর্তা নিহত হন।
এর জেরে পুলিশ রোববার দলটির কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযান পরিচালনা করেছে। এ অভিযানকালে সংঘাত-সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হন।
পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ৫ পুলিশকে জিম্মি করেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্যকে জিম্মি করে রেখেছে টিএলপি) সমর্থকরা। তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে বলেও ডনের খবরে জানানো হয়। দলটির প্রধান মোহাম্মদ সাদ রিজভিকে গ্রেফতারের পর সহিংস সংঘাতের সপ্তাহখানেক পর এমন ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পুলিশ জানায়, জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রোববার এক বিবৃতিতে পাঞ্জাব পুলিশ জানায়, ভোরে নওয়ানকত পুলিশ স্টেশনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে রেঞ্জারস ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ফাঁদে আটকে ডিএসপিকে মারকাজে (টিএলপির প্রধান কার্যালের নাম) তুলে নিয়ে গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মসজিদ কিংবা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনার ইচ্ছা পুলিশের নেই। তবে আত্মরক্ষা ও জনগণের সম্পদ সুরক্ষায় অভিযানে যেতে হতে পারে।
একটি সরকারি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ১৫ পুলিশ কর্মকর্তা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মারাত্মকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় টিএলপির চার কর্মী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন- দলটির মুখপাত্র শফিক আমিনি বলেন, লাহোরের ইয়ামিন খান চকে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে কর্মীদের পুলিশ সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। রোববার আমাদের চার সমর্থককে হত্যা ও বহু লোককে আহত করেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, ফরাসি রাষ্ট্রদূত পাকিস্তান ছেড়ে না গেলে এবং সরকারের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত নিহতদের কবর দেব না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সে নবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারে পাকিস্তান সরকারকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল টিএলপি।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ দলটির প্রধান মোহাম্মদ সাদ রিজভিকে গ্রেফতার করে। এতে দেশজুড়ে টিএলপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
লাহোর পুলিশের মুখপাত্র আরিফ রানা বলেন, টিএলপি সমর্থকদের হাতে জিম্মি ছয়জনের মধ্যে এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও আধাসামরিক বাহিনীর দুই সদস্য রয়েছেন। বলেন, টিএলপি সমর্থকদের কাছে দুটি জ্বালানি ট্যাংকার রয়েছে, যাতে কয়েক হাজার লিটার পেট্রোল রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিকে তারা পেট্রোলবোমা ও পাথর নিক্ষেপ করছেন। এছাড়া গুলিও করছেন। এতে ১১ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
গত সপ্তাহে দলটি নিষিদ্ধ করার পর তাদের খবর প্রকাশে পাকিস্তানি চ্যানেলগুলোকে নিষেধ করা হয়েছে। রোববার সংঘর্ষস্থলে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নদী বন্দর / এমকে