বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বাজার স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছরের শুরুতেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এরপর হিলি স্থলবন্দরসহ বেশ কয়েকটি বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় আমদানি। আমদানি শুরুর প্রথমদিকে চালের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়লেও আবারও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার।
আমদানি কমের অযুহাতে বন্দরে এবং স্থানীয় খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে সব ধরনের চালের দাম। চার দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। লকডাউনের মাঝে হঠাৎ করে চালের বাজার অস্থির হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হিলির সাধারণ ক্রেতারা।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে আমদানিকৃত সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণা-৫ জাতের চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে, কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে আটাশ জাতের চাল ৪৮ টাকা, কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট। এ ছাড়া শম্পা কাটারি জাতের চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি দরে।
চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক আলম হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলছে। আর লকডাউনে আমাদের তেমন কামাই-রোজগার নেই। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেছে। কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
চাল কিনতে আসা আমেনা বিবি বলেন, একটু সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ চালের বাজার মনিটরিং করলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
কথা হয় আরও কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তাদেরও ভাষ্য, সরকার চাল আমদানি শুরু করেছে। ভাবলাম আমরা সাধারণ ক্রেতারা কম দামে চাল কিনতে পারব। কিসের কম দাম, বাজারে দেখছি আরও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাল আমদানি তো ঠিকই হচ্ছে, তাহলে চালের দাম কেন বাড়ছে সরকারের এটি খতিয়ে দেখা দরকার।
চট্টগ্রাম থেকে হিলি স্থলবন্দরে চাল কিনতে আসা রাকিব জানান, আমি গত এক মাস থেকে হিলি স্থলবন্দর থেকে চাল কিনি। হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি কমিয়ে দিয়ে চালের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে। প্রতিকেজি চালের দাম বন্দরেই ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। আমাদের চাল কিনতেও সমস্যা হচ্ছে, বিক্রি করতেও সমস্যা হচ্ছে।
হিলি বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা স্বপন বলেন, আমরা বন্দর থেকে চাল কিনে বাজারে বিক্রি করে থাকি। বন্দরে প্রতিকেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বন্দর থেকে বেশি দামে কিনছি আবার ঘরে চালগুলো আনতে খরচ আছে। সবমিলিয়ে আমরা বেশি দামে কিনছি, বেশি দামে বিক্রি করছি। এখানে আমাদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক ললিত কেসেরা জানান, চাল আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। যে কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। চাল আমদানি কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে যানজট, অন্যদিকে চাল আমদানিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে আসায় চাল আমদানি কমেছে। যার প্রভাবে চালের দাম বেড়েছে।
আরও এক আমদানিকারক বিকাশ চন্দ্র বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চাল আমদানি করতে না পারলে ২৫ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে ৬০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে হবে। আর ৬০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। তাই আমরা চাল লোডিং কমিয়ে দিয়েছি। সরকার যদি চাল আমদানির সময়সীমা বাড়িয়ে দেয় তাহলে চাল আমদানিও বাড়বে সেই সঙ্গে বাজারে চালের দাম কমে আসবে।
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে চাল আমদানি শুরুর পর গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় ৩ হাজার ৪৩টি ট্রাকে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৩০ কোটি ৬ লাখ টাকা।
নদী বন্দর / এমকে