মেহেরপুরের গাংনীর মিনাপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জুয়েল। জেলার সবচেয়ে বড় পশুহাট বামন্দী হাটে ৮টি গরু তোলেন তিনি। পরপর দুই হাট ঘুরেও একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি জুয়েল। করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারণে বাইরের জেলা থেকে কোনো ব্যাপারী না আসায় ক্রেতা মিলছে না। গরুপ্রতি ২০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত কম দাম হাঁকছেন ক্রেতারা। লোকসান হওয়ায় গরু বিক্রি করতে পারছেন না।
এদিকে বাওট গ্রামের খামারি আসাদুল ইসলামও কয়েক হাট ঘুরছেন দু’টি গরু বিক্রির জন্য। কিন্তু ক্রেতা মিলছে না। গেল বছর করোনার কারণে গরু পালন করে ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল তারা। লকডাউনের কারণে এবারও লোকসানের শঙ্কায় আসাদুল। করোনা ও লকডাউনে শুধু জুয়েল, আসাদুল নয়; তাদের মতো মেহেরপুরের শতাধিক ব্যবসায়ী ও খামারি গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসার শঙ্কায় দিশেহারা।
জানা গেছে, মেহেরপুরে বামন্দী হাট সবচেয়ে বড় পশুর হাট। এখানে প্রতি হাটে গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। তবে বাইরে থেকে ব্যাপারী না আসায় কেনাবেচা নেই বললেই চলে।
কামারখালী গ্রামের গরুর ব্যাপারী খোরশেদ জানান, হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল আমদানি হলেও ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যাপারীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গরু কিনে তা বিক্রি করেন হাটে। বাইরে থেকে ব্যাপারী এসে গরু কিনে চালান করেন রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়। লকডাউনে বাইরের জেলা থেকে কোনো ব্যবসায়ী আসছেন না। ফলে কাঙ্ক্ষি দাম মিলছে না। গরু প্রতি ২০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে।
ছাতিয়ানের গরু ব্যাপারী লোকমান জানান, তিনি একটি গরু কিনেছেন এক লাখ ১০ হাজার টাকায়। কিন্তু স্থানীয় ব্যাপারীরা ৮০ হাজার টাকার বেশি আর দাম করছেন না।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবশেষ ২০২০ সালের লকডাউনে দুই ঈদে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তা কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন করে তারা গরু পালন শুরু করেন। অনেকেই বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পশুপালন করছেন। গেল বছরের মতো এবারও যদি লোকসান গুনতে হয়, তাহলে পথে বসবেন তারা। অনেকেই পশুপালনে আগ্রহ হারাবেন। জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পশু পালন। পশু পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।
বামন্দী-নিশিপুর পশুহাট ইজারাদার আব্দুল আলিম বলেন, প্রতি হাটে এক থেকে দেড় হাজার গরু ছাগল কেনাবেচা হতো। লকডাউনের কারণে এখন দেড়শ’ গরুও বিক্রি হয় না। এতে খামারি-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইজারাদার হিসেবে আমাকেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বছর করোনার কারণে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবারও করোনা ও লকডাউনের কারণে লোকসান গুনতে হবে।
নদী বন্দর / জিকে