1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
সৌন্দর্যের ফুল এখন গবাদি পশুর খাবার - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৫৬ বার পঠিত

কিছুদিন আগেও মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছিল লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। এসব এলকার কৃষকরা ফুলের রঙে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল।

এছাড়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিনিদন দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাতেন।ফুলচাষি আর ব্যাপরীর হাকডাকে মুখরিত থাকতো এসব এলাকা।তবে করোনার কারণে সে দৃশ্য পাল্টে গেছে।এসব স্থানে এখন আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারও ফুলচাষি আর বিক্রেতার অভাবে খাঁ খাঁ করছে।

প্রায় লক্ষ টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে গাঁদা আর দুই বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা চাষ করেছিলেন কলিগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের হোসেন আলী। সবে মাত্র ফুল উঠা শুরু হয়েছিল। সপ্তাহে গড় ৩০-৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রিও করছিলেন তিনি। আরও তিন মাস ফুল বিক্রি হতো। কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গেছে।

jagonews24

হোসেন আলী জানান, লকডাউনে ফুল বিক্রি করতে না পারায় দুই বিঘা গাঁদা ও এক বিঘা জমির রজনীগন্ধা ফুল তুলে ফেলেছেন।কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত জেনেই অধিকাংশ জমির ফুল তুলে ফেলেছেন তিনি।

দুই বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলেন একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন। এক সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা বন্ধ থাকায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল। এদিকে ফুল তুললে গাছ মরে যাচ্ছে। গাছ থেকে একবার ফুল তুলতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে ফুল গাছ তুলে ফেলতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। এরমধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনী ২৪ হেক্টর, বাকি জমিতে অন্যান্য ফুল চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। ফলে ফুল বিক্রিতে ধ্বস নামে।এতে ফুলচাষিদের ব্যাপক লোকসান হয়।বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরু ছাগল দিয়ে খাইয়েছিল।করোনার প্রভাব কিছুটা কমার পর চাষিরা নতুন করে ফুল চাষ শুরু করে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্নে সবেমাত্র ফুল বিক্রি শুরু হয়।কিন্তু এবারো সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

jagonews24

কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ফুল চাষ করেছিলাম। কিন্তু করোনা সব মাটি করে দিল।

ফুলচাষি শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গরম জাতের গাঁদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় বাজারে ফুল নিতে পারিনি। ফলে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে লোকসান হয় দেড় লক্ষ টাকার মত। এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম। কিন্তু আবারো স্বপ্ন ধুলিষ্যৎ হয়ে গেল।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর এলাকায় ফুল চাষ বিস্তার লাভ করতে থাকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়েছে নারী-পুরুষের।

সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন।

jagonews24

ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি লিটন হোসেন জানান, এবছর আমার দুই বিঘা জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপের চাষ ছিল। এছাড়া প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে রয়েছে বিদেশি ফুল জারবেরা। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গোলাপ ও দুই হাজার জারবেরা তুলতাম। প্রতিটি ফুল গড় ৫ টাকা করে বিক্রি হত। কিন্তু করোনার কারণে কোনো বিক্রি নেই। এদিকে ফুল গাছে থাকলে গাছ নষ্ট হয়ে যায় তাই বাধ্য হয়ে খরচ করে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছি। এতে লাভের পরিবর্তে লোকসান হচ্ছে।

সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানান, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুল বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের উপ পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, করোনার কারণে ফুলচাষিরা চরম বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রিও করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতে রাখতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

নদী বন্দর / এমকে

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com