তিস্তায় ধরা পড়ছে প্রচুর সুস্বাদু বৈরালি মাছ।চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। ফলে তিস্তাপাড়ের জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কিছুদিন আগেও তিস্তায় পাওয়া যাচ্ছিল না বৈরালি মাছ।গত ৩ এপ্রিল উজানের স্বচ্ছ নীলাভ পানির সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে বৈরালি মাছ আসা শুরু করে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ধারে সামিয়ানা টাঙিয়ে থাকছেন জেলেরা। ভোর থেকে শুরু হয় বৈরালি মাছ ধরা।
জেলেরা জানান, তিস্তা থেকে প্রায় বিলুপ্তি হচ্ছিল বৈরালি মাছ। গত তিন বছর তিস্তায় পানি কম আসায় বৈরালি মাছ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সুস্বাদু এ মাছ বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি হতো। দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর পঞ্চগড় ও রংপুরে অসম্ভব জনপ্রিয় বৈরালি মাছের যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটাই এবার কেটেছে।
এলাকাবাসী জানান, উজানে ভারতের একাধিক জায়গায় ও বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সেচের জন্য বাঁধ দেয়ায় শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে স্রোত কমে যায়। আবার যখন নদীতে ঘোলা পানি আসে তখন বৈরালি মাছ হারিয়ে যায়।
তিস্তা পাড়ের বাইশপুকুর চরের জেলে হারুন মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে উজানের জোয়ারে নদীতে স্বচ্ছ নীলাভ পানি আসার পর ভরে গেছে বৈরালি মাছ। তিস্তা ব্যারেজ এলাকার গ্রাম ও চরের প্রায় পাঁচশতাধিক জেলে এখন আর রাতে বাড়িতে যায় না। নদীর ধারেই সামিয়ানা করে থাকে।ভোর থেকে বৈরালি মাছ ধরা শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ মণ বৈরালি মাছ বিক্রি হয়।
জেলেরা জানান, ইলিশের মতোই বৈরালিও ধরার পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। দ্রুত বরফ দিতে না পারলে বেশিক্ষণ সংরক্ষণও করা যায় না। মাছটি টাটকা থাকতেই রান্না করতে হয়। তাই বিকেলের মধ্যেই মাছ ধরা শেষে বিক্রি করতে হয়। কয়েকদিন আগে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি ছিল। এখন প্রচুর বৈরালি ধরা পড়ায় ৩০০-৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে মাছটি বৈরালি নামে পরিচিত হলেও বৈজ্ঞানিক নাম-বারিলিয়াস বারিলা। এটি মূলত স্বচ্ছ পানির মাছ। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা তিস্তা ও ধরলা নদীতে এ মাছ পাওয়া যায়। তিস্তা-ধরলার ধারা নামায় ব্রহ্মপুত্র নদীতেও মেলে বৈরালি।
নীলফামারী বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানি উপকেন্দ্র প্রধান ড. খন্দকার রশীদুল হাসান বলেন, সুস্বাদু বৈরালি মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে বৈরালি মাছকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।ফলে মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে ২০ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। ফলে বাজারে ছোট মাছের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তায় গত ২০দিন থেকে পানি বৃদ্ধি অবহ্যাত রয়েছে। যা ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। পাশাপাশি নদীতে প্রচুর বৈরালি মাছ ধরা পড়ায় স্থানীয়ভাবে পুষ্টির চাহিদা পুরণ হচ্ছে। তিস্তা খনন হলে সারাবছর বৈরালি ধরা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নদী বন্দর / এমকে