চলতি বছর দেশের হাওরে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সেখানে শ্রমিক সঙ্কটও নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তবে হাওরভুক্ত ৭টি জেলার গড় হিসাবে ২০ ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। হাওরভুক্ত কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় এবার ধান চাষ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) অনলাইনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গতবছর হাওরের ধান কাটার জন্য যেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, এ বছরও সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। এ মুহূর্তে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের কোনো সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। একইসঙ্গে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে এবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ বছর ধান-চালের উৎপাদন বাড়াতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। বেশি জমি চাষের আওতায় আনা, উন্নত জাতের ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদেরকে প্রদান করা হয়েছে। হাইব্রিড ধানের বীজ সহায়তা বাবদ ৭৬ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে।’
‘এছাড়া কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীরা করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কঠোর পরিশ্রম করেছেন, কৃষকের পাশে থেকেছেন। নতুন উন্নত জাতের ধান চাষের জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন’ বলেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এসব উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একইসঙ্গে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। আশা করছি- গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরোতে ৯-১০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হবে।’
কৃষিমন্ত্রী এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ধান কাটায় এগিয়ে আসার ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর সারাদেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর হাওরভুক্ত ৭টি জেলা- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরভুক্ত ৭টি জেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ। অন্যদিকে শুধু হাওরের ১ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৪০ ভাগ।
সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৮২টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। মার্চ ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
সভা সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। এ সময় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / এমকে