নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরবালুয়া দ্বীপ যেন জেলার একটি ‘ছিটমহল’। অপার থাকা সম্ভাবনা স্বত্ত্বেও সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় কাঙ্খিত উন্নয়নও হচ্ছে না এ জনপদে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের উড়িরচর ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরবালুয়া নিয়ে এ দ্বীপটি গঠিত। তবে উড়িরচর নামেই দ্বীপটি সর্বাধিক পরিচিত।
কৃষক ও জেলে এ দুই পেশার মানুষই এখানে বেশি বসবাস করেন। বহমান বামনীয়া এবং মেঘনা নদীর ফলে ভূখণ্ড থেকে এ দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। চলাচলের একমাত্র ব্যবস্থা নদী পারাপার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য এ নদীর ওপর কোনো সেতু নেই। যাতায়াতে নৌকা বা ট্রলারই একমাত্র ভরসা।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটারের দূরত্বে দস্যু কবলিত এ দ্বীপের অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ও প্রশাসনের বিচরণ কম থাকায় জলদস্যুদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে দ্বীপটি।
দ্বীপটি ঘুরে দেখা যায়, অতি নিম্নমানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি এখানে নেই কোনো স্কুল বা মাদরাসা। শিক্ষার হার তাই এখানে প্রায় শূন্যের কোঠায়। চিকিৎসার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল।
চরবালুয়া দ্বীপ সম্পর্কে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা অজিত রায় বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ১০ হাজার ৮৫৮ একর আয়তন বিশিষ্ট এ দ্বীপে এক হাজার ৭৮টি পরিবারের বসবাস।
দ্বীপের মোট জনসংখ্যা চার হাজার ৪৯৭ জন। র মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৩৪৭ জন ও মহিলা দুই হাজার ১৫০ জন। যা কোম্পানীগঞ্জের মোট জনসংখ্যার এক দশমিক ৭৯ শতাংশ।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ মো. খালেদ বলেন, ২০২০ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, এ দ্বীপের মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬১ জন। যা সেখানকার জনসংখ্যার মাত্র আট শতাংশ।
যাতায়াতে সমস্যা হলেও কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ ও মৎস্য আহরণে এখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ দ্বীপে কৃষি জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯২৮ একর। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে ধান, সরিষা, মশুর, তিল, তিশি, মুগ, হেলন, তরমুজ ও বিভিন্ন ধরনের সবজি অন্যতম। বিশেষ করে শশা উৎপাদন ও মৎস্য আহরণের জন্য এ দ্বীপটি বিখ্যাত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, দ্বীপটির জমি খুবই উর্বর হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণ ধান, ডাল ও সবজি উৎপন্ন হয়। যে কারণে কৃষকদেরকে চাষাবাদে উৎসাহ দিতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের মাঝে ইউরিয়া, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ও ডিএপি জিপসাম সার ভর্তুকি ও বীজ দেয়াসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়। আবার উৎপাদিত ধান বিক্রিতে সহায়তাও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক কৃষককে কৃষিকার্ড করে দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেখানে সিডিএসপির প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
স্থানীয় চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, দ্বীপটির সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের চরবালুয়া ও সন্দ্বীপের উরির চরের অধিবাসীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ফলে এখানে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিরোধের জেরে গত এক দশকে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে এখানে।
সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্যাটেলমেন্ট অফিস সূত্র জানায়, কাগজে (নকশায়) সীমানা নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সরেজমিন সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। করোনা পরস্থিতি স্বাভাবিক হলে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তখন এ বিরোধ আর থাকবে না।
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশের (আরআরএফ) একটি ফাঁড়ি আছে। আবার আমরাও সহায়তা করায় দ্বীপটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের চাইতে অনেক ভালো রয়েছে। তবে দূর্গম পথ হওয়ায় সেখানে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জিয়াউল হক মীর বলেন, চরবালুয়া কোম্পানীগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ এলাকার সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। অচীরেই সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।
নদী বন্দর / এমকে