1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
মড়কে নষ্ট ১৫০ কোটি চিংড়ি পোনা, ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা - Nadibandar.com
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৩৪ বার পঠিত

হঠাৎ সাগরের পানিদূষণের কারণে কক্সবাজারে চিংড়ি হ্যাচারিগুলোতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে মড়কের কারণে নষ্ট হয়েছে ১৫০ কোটির বেশি চিংড়ি পোনা। ফলে লোকসানের কারণে এই মুর্হুতে পোনা উৎপাদনে যেতে আতংকে রয়েছেন হ্যাচারিরা মালিকরা। 

চিংড়ি পোনা উৎপাদন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিসার্চ সেন্টারগুলো আগেভাগেই সতর্ক করলে এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না। আর চাষিদের কাছে পোনার চাহিদা থাকা স্বত্ত্বেও পোনা দিতে না পারায় চিংড়ি রফতানিতেও প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজার উপকূলে রয়েছে ৩০টির বেশি চিংড়ি পোনা হ্যাচারি। পোনা উৎপাদনে হ্যাচারিগুলোতে প্রবেশ করানো হয় সাগরের পানি, যা হ্যাচারিগুলোতে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মা চিংড়ি থেকে উৎপাদন করা হয় হাজার হাজার চিংড়ি পোনা।

কিন্তু হঠাৎ সাগরের পানি দূষণের কারণে হ্যাচারিগুলোতে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করতে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ ঘটে। এতে মড়কে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে লাখ লাখ পোনা। মড়কের কারণে পোনা উৎপাদনে যেতে আতঙ্কে রয়েছে হ্যাচারিগুলো।

সোনারপাড়াস্থ মাছরাঙ্গা হ্যাচারি পরিচালক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, জানুয়ারি থেকে হ্যাচারিগুলোতে চিংড়ি পোনা উৎপাদনের মৌসুম শুরু হয়েছে। দুই সার্কেল ভালভাবে পোনা উৎপাদন করে তা সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করেছি। কিন্তু হঠাৎ তৃতীয় সার্কেলে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সব পোনা মারা গেছে। এখন লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সোনারপাড়াস্থ বলাকা হ্যাচারির কর্মচারি ইমাম হাসান রোকন বলেন, তৃতীয় সার্কেলে পোনা উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সব পোনা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই ৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই লোকসানের কারণে সামনে সার্কেলে পোনা উৎপাদনে যেতে সাহস পাচ্ছি না। গত বছরও করোনাভাইরাসের কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার নতুন করে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। সব কিছু মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

কলাতলীস্থ মডার্ণ হ্যাচারি ব্যবস্থাপক মিশন দত্ত বলেন, চাষিদের কাছ থেকে চাহিদা আসছে ৩০ লাখ পোনা। সে চাহিদা অনুযায়ী কার্গো বিমানে বুকিংও দেয়া হয়েছে পাঠানোর জন্য। কিন্তু রাতে যখন প্যাকেটজাত শুরু করি, তখন ৩০ লাখ পোনার স্থানে ১ লাখ পোনাও পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে রিসার্চ সেন্টারগুলো আগেভাগেই সতর্ক করলে এই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না বলে জানিয়েছে চিংড়ি পোনা উৎপাদন বিশেষজ্ঞরা।

চিংড়ি পোনা উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ইব্রাহীম ভূঞা বলেন, হ্যাচারি শিল্প যে সমস্যায় ভূগছে তা হল লুমিনাচ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন। এই ব্যাকটেরিয়ার খুবই মারাত্মক। এটা যখন হ্যাচারিতে প্রাদুর্ভাব হয় তখন শতভাগ পোনা নষ্ট হয়ে যায়। যা বর্তমানে তৃতীয় সার্কেলে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করতে গিয়ে শতভাগ পোনা মড়কে মারা যাচ্ছে।

মোহাম্মদ ইব্রাহীম ভূঞা বলেন, এই ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে হ্যাচারিগুলো। কিন্তু যখন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন এই পদক্ষেপগুলো আর কাজ করে না। সরকারের দুটি রিসার্চ সেন্টার আছে। একটা এফআরআই ও মেরিন রিসার্চ ইনষ্টিটিউট। উপকূলে কি ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, কখন কি ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তা হ্যাচারিগুলোকে আগেভাগেই জানিয়ে দিলে তখন হ্যাচারিগুলোর পদক্ষেপ নিতে সহজ হয়। এখন কোনো ধরনের তথ্য না পাওয়াতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চিংড়ি পোনা মারা যাওয়ায় হ্যাচারি শিল্পটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটা সাগরের পানিতে দূষণটা কি কারণে হচ্ছে তা রিসার্চ সেন্টারগুলো গবেষণা করে বের করা এখন খুবই জরুরি।

স্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) এর মহাসচিব মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সাগরের পানি দূষণে ব্যাকটেরিয়ার যে আক্রমণ তা প্রাকৃতিকভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত চিংড়ি পোনা উৎপাদন সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে উপকূলের ৫০টি হ্যাচারিতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের মধ্যে পোনা উৎপাদন করতে গিয়ে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এই সমস্যা হয়েছে। এটি অতিবৃষ্টি হলে তারপর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণটা চলে যাবে। তারপর আবার আগের ন্যায় ভালভাবে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করতে পারব বলে আশা করছি।

সেব মহাসচিব আরও বলেন, এই সময়টাতে চাষিদের চিংড়ি পোনার চাহিদাটা বেশি। এখন যেহেতু চিংড়ি পোনা উৎপাদন করা যাচ্ছে না; সেহেতু চাষিরাও ঘেরে পোনা ফেলতে পারছে না। এটার কারণে চিংড়ি উৎপাদনে জাতীয়ভাবে ঘাটতি হতে পারে। যেটার কারণে রফতানিতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

স্রিম্প হ্যাচারি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) এর দেয়া তথ্য মতে, প্রতি মৌসুমে কক্সবাজারের হ্যাচারিগুলো ৫টি সার্কেলে উৎপাদিত ৮০০ কোটি চিংড়ি পোনা সরবরাহ করে সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে। কিন্তু এবার ৩ সার্কেলে সরবরাহ করেছে মাত্র ২০০ কোটি পোনা।

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com