নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বিভিন্ন গ্রামে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উপজেলার বেশিরভাগ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও চাহিদামতো পানি উঠছে না। টানা খরায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, গ্রামে নলকূপ থাকলেও নলকূপে পানি নেই। নলকূপের হাতল চেপে পানি বের করা দূরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গভীর নলকূপ থেকে মোটরেও পানি উঠছে না। অবস্থা প্রকট হয়ে ওঠায় পানির সংকটে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
এমন পানির সংকট গত তিন যুগেও দেখা যায়নি। নলকূপে পানি না ওঠায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গত এক মাস ধরে উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়ন, পূর্ব চরবাটা ইউনিয়ন, চরবাটা ইউনিয়ন, চরজুবলি ইউনিয়ন, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের গ্রামের গভীর নলকূপে পানি শূন্যতার কারণে সুপেয় পানির জন্য বড়ই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরবাটা, পূর্ব চরবাটা, চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের পানির চরম সংকট চলছে। পাশাপাশি হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে উপজেলার কিছু কৃষি জমি অনাবাদি থাকছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ চলমান খরা ও অনাবৃষ্টি। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে তারা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন জানান, পানির জন্য মানুষ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ছুটছে। কোথাও গভীর নলকূপে পানি উঠছে সামান্য, আবার কোথাও উঠছে না পানি। যেখানে সামান্য পানি উঠছে সেখানে আবার লম্বা লাইন।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্রামে পুকুর ও ডোবায় পানি না থাকায় গোসল ও গবাদিপশুর পানির জন্য নলকূপই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নলকূপে পানি উঠছে কম।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলায় ১১ হাজার হেক্টর ভূমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে অন্যান্য ফসল ছাড়া শুধু ১১ হাজার হেক্টর ভূমিতে বোরো চাষে খরচ হচ্ছে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার কিউসেক পানি। এর মধ্যে মাত্র ৩০ ভাগ পানি ব্যবহৃত হয় উপরি ভাগ থেকে। এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সম্পূর্ণ ভূগর্ভের পানি দিয়ে চাষাবাদ হয়েছে এ অঞ্চলে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, চলতি বছরের মধ্যে এ মাসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রেকর্ড পরিমাণ নিচে নেমেছে। বৃষ্টি না হলে পানির সংকট তীব্রতর হবে। ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে এই শূন্যতা আরও বেগমান হতে পারে। এটি দীর্ঘায়িত হলে ভূগর্ভে সমূদ্রের লোনা পানি ঢুকে যেতে পারে। ফলে সুপেয় পানির দীর্ঘমেয়াদী অভাব হতে পারে। তাই ভূগর্ভস্ত পানি রক্ষায় কৃষি কাজের জন্য আমাদের উপরিভাগের পানি সঞ্চয়ের বিকল্প নেই।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন বলেন, মাটির গভীর স্তরের পানি রক্ষায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। এই অঞ্চলের কৃষকদের উপরিভাগের পানি সঞ্চয় করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
নদী বন্দর / জিকে