বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনার চরাঞ্চল এখন পাকা মরিচের রঙে লালে লাল। মরিচ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও সবুজক্ষেতে লাল মরিচের সমাহার, কোথাও বা পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে রোদে। আবার কেউবা শুকনো মরিচ বিক্রি করতে চরের বালিপথে হেঁটে যাচ্ছেন হাটে, কেউবা ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের হিসেবে শুধু সারিয়াকান্দিতে এবার শত কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মরিচচাষিরা জানান, বগুড়ায় সারা বছর মরিচের চাষ হলেও অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে মরিচ চাষ হয়ে থাকে তা শুকিয়ে বাছাই করা হয়। বছরের অন্য মাসে যে মরিচ উৎপাদন হয় তা সাধারণত কাঁচা মরিচ হিসেবে বাজারজাত হয়। তাই বর্তমানে ওঠা লাল মরিচে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধ্যে কৃষকরা মরিচ তুলতে শুরু করেছেন।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু জেলায় আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি একর জমিতে চাষিরা মরিচ আবাদ করেন। অন্যদিকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫১৫ টন ধরা হলেও আবাদ অনুযায়ী উৎপাদনও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
বগুড়ায় যে পরিমাণ মরিচ চাষ ও উৎপাদন হয়ে থাকে, তার সিংহভাগ হয়ে থাকে যমুনা নদীর চরে। যমুনা পাড়ের সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরে বেশি চাষ হয় মরিচ। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার যমুনা নদীর চর এলাকায় মরিচ শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মরিচ চাষিরা। কিছু কিছু এলাকায় মরিচ বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা, আচারের পাড়া, সুজাইতপুর, সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা, তিতপরল, বোহাইল, যমুনা নদীর কয়েক কিলোমিটার বাঁধ জুড়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে।
সারিয়াকান্দির বোহাইল চরের মাসুদ মিয়া বলেন, তিনি ৯ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয় হাটে নেওয়া পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় আট থেকে ৯ মণ শুকনো মরিচ হয়। তিনি এ বছর ৮ হাজার টাকায় এক মণ বিক্রি করেছেন। বোহাইল হাটের পাইকার আজাদুল জানান, চরের জমির মরিচের গুণ-মান ভালো। বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী কোম্পানির কাছে এর চাহিদা বেশি। তিনি এই হাট থেকে শুকনো মরিচ কিনে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বেশি ভালো হলে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতি মণ মরিচ।
জেলার সারিয়াকান্দির মরিচ চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, লাল মরিচ গাছ থেকে সংগ্রহ করছে মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। লাল টোপা মরিচ কৃষকের আঙিনায় শুকিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যাচ্ছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মরিচ চাষি শাহাদত হোসেন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বোহাইল চরের কদভানু বিবি ও হাসি খাতুন বলেন, জমি থেকে প্রতি বস্তা মরিচ তুলে ১০০ টাকা পান তারা। দিনে চার-পাঁচ বস্তা মরিচ তুলতে পারেন।
সারিয়াকান্দিতে এবার শত কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ। দেশের মধ্যে চরের মরিচ গুণগত মানে সেরা। তাই এর চাহিদা বেশি। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় বরাবরই মরিচের ভালো ফলন হয়। বগুড়ায় যে লাল মরিচ চাষ ও বাজারজাত হয় তা অন্যান্য জেলার চেয়ে মানে ভালো। সে কারণে বগুড়ার মরিচের ভালো দাম পান কৃষকরা।
চলতি বছর ১৭ হাজার ১৬০ টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এর বেশি ফলন পাওয়া যাবে। শুধু সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় উফশী মরিচসহ মোট ৩ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, গুণগত মান ভালো বলেই দেশব্যাপী এ জেলার মরিচের সুনাম রয়েছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি এখানকার মরিচ কেনায় বিনিয়োগ করে। এ কারণে জেলার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
নদী বন্দর / জিকে