করোনাভাইরাস প্রথমে মানুষের হাতে প্রবেশ করে। তারপরে ওই ব্যক্তি তার হাত দিয়ে নাক-চোখ বা মুখ স্পর্শ করলে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে কখনো ভেবে দেখেছেন কি? দিনে আপনি ঠিক কতবার নিজের অজান্তেই মুখ স্পর্শ করে থাকেন? এ পরিসংখ্যান আমার বা আপনার কাছে না থাকলেও বিজ্ঞানীরা ঠিকই জানেন।
আমেরিকান জার্নাল অব ইনফেকশন কন্ট্রোলের ২০১৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে , মানুষ এক ঘণ্টায় কমপক্ষে ২০ বারেরও বেশি সময় তাদের মুখ স্পর্শ করে। এর মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ সময়, চোখ, নাক বা মুখের সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া কোনো অফিসের কর্মকর্তা ও বিশেষ কাজটি করেন ঘণ্টায় অন্তত ১৬ বার। আবার যারা খুব বেশি স্বাস্থ্য সচেতন তারাও এটি করেন। তবে সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। তারা ঘণ্টায় অন্তত ৯ বার এই কাজটি করে থাকেন।
করোনার এয়ারোসোল এখন বাতাসেও ঘুরে বেড়ায়। এই জীবাণু যেকোনোভাবে বিভিন্ন পৃষ্ঠে জীবিত থাকতে পারে দিনের পর দিন। আর এসব পৃষ্ঠে কোনো না কোনো মানুষের হাত পড়বেই।
এরপর ওই হাত থেকে ভাইরাস মুখ-চোখ, নাক এবং মুখের মিউকাস ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা গলা এবং ফুসফুসের পথে গিয়ে বংশবিস্তার শুরু করে।
এরপরই করোনার বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে মানবদেহে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাস মুখ থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। যা ড্রপলেট হিসেবে মাটিতে বা যেকোনো পৃষ্ঠে পড়তে পারে। আবার এয়ারোসোল হয়ে বাতাসে মিশে গিয়ে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।
টলেডো মেডিকেল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান জেনিফার হানরাহানের মতে, করোনাভাইরাস বেশ কিছু ভূ-পৃষ্ঠে ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এসব পৃষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ আক্রাপন্ত হতে পারেন কোভিড-১৯ এ।
এজন্যই বিশেষজ্ঞরা সর্বদা এই পরামর্শ দিয়ে আসছেন যে, চোখে-মুখে ও নাকে যতটা সম্ভব কম স্পর্শ করার চেষ্টা করতে হবে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান এবং ব্যবসায়ের প্রোভাস্ট প্রফেসর ভেন্ডি উডের মতে, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো মুখে হাত দেওয়া। যদিও এটি নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কষ্টকর। কারণ মানুষ তাদের মনের অজান্তেই মুখ স্পর্শ করে থাকেন।
নদী বন্দর / এমকে