নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আগামী ২৩ মের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া না হলে দেশের সব নৌরুটে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী লঞ্চ পুনরায় চালু করার দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের এই দুই সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের লঞ্চ টার্মিনালের জেটিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতারা এ হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় টার্মিনালের জেটিতে যাত্রীবাহী সব লঞ্চ সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সবুজ শিকদার, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসানুল করিম চৌধুরী বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ অন্য নেতারা। বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে নদীবন্দর এলাকায় তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ-থানার সামনে দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।
সমাবেশে নেতারা ও নৌযান শ্রমিকরা জানান, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হলে সরকার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর থেকে লক্ষাধিক নৌযান শ্রমিক কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও অধিকাংশ শ্রমিকদের ভাগ্যে তা জোটেনি।
তাদের অভিযোগ, ঈদের আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিলেও এ ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তবে সরকার সড়ক ও আকাশপথে অভ্যন্তরীণ যানবাহন ও বিমান চলাচলের অনুমতি দিলেও নৌপথে বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে। যে কারণে সর্বস্তরে লকডাউন ভঙ্গ হয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি প্রদান করতে সরকারের কাছে দাবি করেন তারা।
আগামী ২৩ মের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া না হলে দেশের সব নৌরুটে সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সবুজ শিকদার বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকরাই বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযানে কর্মরত আছেন। শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে আগামী ২৩ মের পর সারাদেশে নদীর মাঝখানে লঞ্চ নোঙর করে নৌপথ বন্ধ করে দেয়া হবে। কোনো ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলতে দেয়া হবে না। এতে করে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে নৌযান শ্রমিকরা এর কোনো দায়ভার নেবে না। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই দায়ী থাকবেন।
নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জ, মতলব, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মোহনপুর ও রামচন্দ্রপুরসহ আরও বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট বড় ৭২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে থাকে। এসব লঞ্চে ১ হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মচারী পেশাগতভাবে যুক্ত রয়েছেন। এসব লঞ্চে প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক যাত্রী চলাচল করে থাকেন।
নদী বন্দর / পিকে