নওগাঁর পোরশায় রোগের প্রাদুর্ভাবে উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম (৩০) নামের এক সোনালী মুরগি খামারির স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। খামারে পাঁচটি শেডে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২ হাজার ৭০০ পিস মুরগির মধ্যে বর্তমানে ৭০০ পিস আছে। এতে তার প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নিবন্ধনভুক্ত ‘এ শ্রেণির’ এ খামারি চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কোনো খামারে পরামর্শের জন্য গেলে ভিজিট (পরিদর্শন) হিসেবে টাকা দিতে হয়। অন্যথায় তিনি কোনো খামারির খামারে যাবেন না বা পরামর্শ দেবেন না বলে জানান।
উপজেলা জালুয়া গ্রামের উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম। একসময় তিনি প্লাস্টিকের ব্যবসা করতেন। তবে দোকানে বেচাকেনা কম হওয়ায় লাভের পরিমাণটা ছিল কম। বাধ্য হয়ে দোকান ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ২০১৮ সালে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ব্রয়লার মুরগি দিয়ে খামার শুরু করেন। সেবার তিনি প্রায় ১২ হাজার টাকা লাভ করেন। ব্রয়লারে পরিশ্রম ও খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা বাদ দিয়ে এবার নজর দেন সোনালীর দিকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লভ্যাংশ বেশি পাওয়ায় স্বপ্নটাও বড় হয়। খামার সম্প্রসারণ করে পাঁচটি শেড করেন।
পাঁচটি শেডে বিভিন্ন বয়সের মুরগির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭০০টি। ৯ দিন বয়সের বাচ্চা তিন হাজার ৫০০টি, ৫৮ দিন বয়সের তিন হাজার ৬০০টি, ৪৭ দিন বয়সের দুই হাজার ৯৫০টি, ৩১ দিন বয়সের তিন হাজার ৩০০টি এবং ১৭ দিন বয়সের দুই হাজার ৮৫০টি। আগামী ১০-১৫দিনের মধ্যে বড় সাইজের মুরগি বিক্রি করার উপযোগী ছিল। খামারে পাঁচজন কর্মচারী কাজ করতেন।
ৃগত ১৫ মে রাতে হঠাৎ করে একটি শেডে চারটি মুরগি মারা যায়। পরদিন মুরগি মারা যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। দফায় দফায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবগুলো মরে বর্তমানে ৭০০ পিসের মতো আছে।
প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। তবে মুরগিতে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও ছোটগুলো এখনো ভালো আছে। মৃত মুরগিগুলোকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পরদিন রাত থেকে হঠাৎ করেই মুরগি মরতে শুরু করে। বিষয়টি স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসারকে ফোনে জানানো হলে তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। বাধ্য হয়ে জেলা কর্মকর্তাতে অবগত করা হলে তিনি খামার পরিদর্শনে আসেন। তিনি পরামর্শ দেন এবং কিছু মৃত মুরগি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. শরিফুল ইসলাম কয়েকবার খামারে এসেছিলেন এবং টাকাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন টাকা দেয়া বন্ধ করি তিনি আর খামারে আসেন না। এমনকি পরামর্শের জন্য ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার পরামর্শ পেলে হয়তো মুরগিগুলো কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারতাম।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামের অন্যান্য খামারির পরামর্শ নিয়েই খামার শুরু করেছিলাম। কয়েক দফায় বেশ লাভ হয়। এতে বড় খামার করার আগ্রহ বেড়ে যায়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বড় করে খামার করেছিলাম। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে বড় মুরগি বিক্রি শুরু হতো। কিন্তু রোগের কারণে এখন সবগুলো মারা পড়েছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। মুরগিগুলো বেঁচে থাকলে প্রায় ১৮-১৯ লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। সেখান থেকে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু এখন সব শেষ। এনজিও পাবে তিন লাখ ও ফিডের দোকানে বাকি ১০ লাখ টাকা। এসব টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
জানতে চাইলে পোরশা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মুরগি অসুস্থ হওয়ার ব্যাপারে ওই খামারি বিষয়টি আমাকে আগে জানাননি। অবগত হওয়ার পর তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসের বাইরে কোথাও সেবা দিতে গেলে দূরত্ব ও রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে খামারিরা কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। তবে অফিসে কেউ সেবা নিতে আসলে কোনো টাকা নেয়া হয় না।’
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৭ মে খামারি রবিউল ইসলাম তার খামারের ব্যাপারে আমাকে অবগত করেন। সরেজমিনে তার খামার পরিদর্শন করা হয়। মারা যাওয়া মুরগির কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জয়পুরহাট ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর রানীক্ষেত, কক্সিডিওসিস ও গামবুরো এ তিনটি রোগ একত্রে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ওই খামারিকে রোগ নিবারণে কিছু ওষুধ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। মরা মুরগিগুলো মাটিচাপা দিতে বলা হয়। তবে ওই খামারির সঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কিছু ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।’
নদী বন্দর / পিকে