গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় আঘাত আনে। তবে এ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কম ছিল। তবে এবার চলতি জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বুধবার (০২ জুন) আবাহওয়া অধিদপ্তরে গত এক মাসের আবহাওয়ার পর্যালোচনা এবং আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন।
সভা থেকে জানা যায়, অতিভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। পাশাপাশি মাঝারি মাত্রার দাবদাহ বয়ে যেতে পারে দেশের কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শ ম সজিব হোসেন জানান, প্রতি মাসের শুরুতে পরিচালকের সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সভায় জানানো হয়, মে মাসে স্বাভাবিক অপেক্ষা ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি সারাদেশের গড় হিসাব। কিন্তু রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি এবং খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জুন মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাসের শুরুতে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত পরিমাপ একেক বিভাগে একেক রকম হয়।
এ ছাড়া জুনে ঢাকা বিভাগে ৩৫৬ মিলি, ময়মনসিংহে ৪৩২ মিলি, চট্টগ্রামে ৫৮৯ মিলি, সিলেটে ৬৩৪ মিলি, রংপুরে ৩৮৯ মিলি, খুলনাতে ২৯৬ মিলি, বরিশালে ৪৮৩ মিলি মিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়েছে বলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ অথবা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। উত্তর-মধ্য অঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন মাঝারি অথবা তীব্র বজ্রঝড় ও দেশের অন্যান্য জায়গায় তিন থেকে চার দিন হালকা অথবা মাঝারি বজ্রঝড় হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ মাসে একটি মৃদু অর্থাৎ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অথবা মাঝারি ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির দাবদাহ বয়ে যেতে পারে বলেও সভায় জানানো হয়।
জুন মাসে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ পূর্বের কিছু অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়াও দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুস্ক থাকতে পারে
তাপমাত্রার পূর্বাভাসে বলা হয় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
এ সময় ঢাকায় দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০-১৫ কিলোমিটারে ওঠে যেতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার হতে আসাম অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে অবস্থান করছে। অপর লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ হতে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল বুধবার (০২ জুন) সারাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুরের সৈয়দপুরে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ৫৪ মিলিমিটার।
নদী বন্দর / সিএফ