1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
বাগান খালি বাজারেও নেই লিচু, দাম বেড়ে দ্বিগুণ - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ জুন, ২০২১
  • ১৪১ বার পঠিত

পাবনায় বেড়ে গেছে লিচুর দাম। দু’দিনের মধ্যে লিচুর দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় আগ্রহী অনেকেই আর কিনতে পারেননি লিচু। ফলন বিপর্যয়ের কারণেই এ অবস্থা বলে জানান বাগান মালিক ও ব্যাপারিরা।

রোববার (৫ জুন) লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচু প্রধান এলাকা, জয়নগর, মিরকামারি, চর-মিরকামারি, মানিকনগর, বাবুল চড়া, কাঠালবাড়িয়া, চর গড়গড়ি, দাদাপুর, পাকুরিয়া কামালপুর, চরকুড়লিয়া ঘুরে দেখা গেছে, গাছে নেই লিচু। অথচ জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকে লিচুর। এ বছর লিচু বাগানের মাত্র ২৫ শতাংশ গাছে লিচুর মুকুল এসেছিল। ফলে ভরা এ মৌসুমে লিচুহীন হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদী।

বাংলাদেশ ফার্মারস অ্যাসাসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান চাষি জানান, তার বাগানে এবার সামান্য কিছু মুকুল আসার পর নতুন পাতা বের হতে শুরু করে। তাই গাছে নেই লিচু। ঈশ্বরদীতে সামান্য যা লিচু যা ছিল তা ব্যাপারিরা কিনে বাজারে নিয়ে যান। এক সপ্তাহের মধ্যেই তা প্রায় ফুরিয়ে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী যোগান নেই। এজন্য দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এখানে কৃত্রিম সঙ্কটের মতো কিছু ঘটেনি।

ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান চাষি বেইলি বেগম জানান, তার সাত বিঘার লিচু বাগান রয়েছে। জুন মাসের শুরুতেই তার গাছে লিচু শেষ হয়ে গেছে। এবার তার বাগানে খুবই কম পরিমাণ গাছে মুকুল এসেছিল। তাই বাগান এত তাতাড়ি লিচুশূন্য হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, এবার বাগান মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তেমনি ভোক্তাদেরও বেশি টাকায় লিচু কিনে খেতে হচ্ছে।

ছলিমপুর গ্রামের আরেক সফল চাষি হাসেম উদ্দিন জানান, লিচুর আয় থেকে সংসার চালিয়েও দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। মানুষ করেছেন দুই ছেলেকেও। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিশালাকৃতির ৬৫টি লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে ৫-৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন। কিন্তু এবার লিচু না আসায় তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ।

তিনি আরও জানান, এখন তো লিচুর ভরা মৌসুম চলে। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি এসেই লিচু শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর দুই-একদিন পর দ্বিগুণ না দাম তিন গুণ হবে বলে জানান তিনি।

মানিকনগর গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান মুকুলের দুই শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লিচ চাষ করে আসছেন বলে জানা যায়। মুকুল বলেন, এবার গাছে পর্যাপ্ত মুকুল না আসায় ও দাবদাহের কারণ লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে গাছে লিচু নেই।

jagonews24

ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের বাগান মালিক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় প্রায় তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এবার খুব কম গাছে মুকুল এসেছিল। তাই গতবারের চেয়ে অর্ধেকেরও কম টাকায় লিচু বিক্রি করতে পেরেছি। এখন আমার সব গাছ লিচুশূন্য’।

লিচু চাষে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক কিতাব মণ্ডল জানান, বিগত বছরগুলোর যে বাগান সাত লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল, এবার মুকুল না আসায় মাত্র এক লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পেরেছেন।

তিনি আরও জানান, জুন মাসের ৬-৭ তারিখে বাজারে অনেক লিচু থাকে। কিন্তু এবার বাগান খালি তাই বাজারেও লিচু নেই। ব্যাপারিরা ঘুরে ঘুরে সামান্য যে লিচু পাচ্ছেন তাই বেশি দরে বিক্রি করছেন।

বাজারে লিচু কিনতে আসা পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার স্কুলশিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘দু’দিন আগে যে লিচুর দাম ছিল ১০০-২৫০ টাকা। সে লিচু এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে পাঁচশ টাকা দরে’।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই শীত কম পড়ে। ফলে কাঙ্খিত মুকুল বের হয়নি। এতে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এখানে কৃষক বা কৃষি বিভাগের কিছু করার ছিল না।

ঈশ্বরদী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এবারে লিচুর মুকুল কম আসার কারণ হিসেবে জানান, সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে বোম্বাই লিচুর গাছে মুকুল আসে। কিন্তু এবারে মধ্য জানুয়ারি থেকে শীতের প্রকোপ কমে যাওয়ায় মুকুল কম এসেছে। তবে মোজাফ্ফর জাতের লিচুর মুকুল জানুয়ারির প্রথম দিকে আসায় এ জাতে কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদীতে বোম্বাই লিচুর চাষই সবচেয়ে বেশি হয়। ফলে ঈশ্বরদীর চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সারের মাত্রার কম-বেশির কারণেও মুকুল কম আসতে পারে। এজন্য সারের মাত্রাটি তাদের কাছ থেকে জেনে নিলে চাষিরা পরের বছর উপকৃত হতে পারেন জানান তিনি।

নদী বন্দর / জিকে

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com