নওগাঁর সাপাহারে বাজারে আমের ছড়াছড়ি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম রয়েছে। লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদে ভ্যানের ওপর আম রেখে মাথায় গামছা জড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ রমজান আলী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিমুলডাঙা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে সাপাহার উপজেলা সদরে আমবাজারে এসেছেন। দুপুর ২টা বেজে গেলেও তিনি বিক্রি করতে পারেননি আম। দাম একটু বেশি পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
বৃদ্ধ রমজান আলী জানান, ভ্যানে করে চার মণ খিরসাপাত ও দুই মণ গুটি আম নিয়ে বাজারে এসেছেন। খিরসাপাত আমের দাম ১৫০০ টাকা মণ রাখলেও ক্রেতারা দাম হাকছেন ১১০০ টাকা। অবশেষে ২টার পর ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন আম।
দাম কম কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাজারে আমের আমদানি বেশি। সে তুলনায় ব্যবসায়ীরা কম এসেছেন। ক্রেতা কম থাকায় আমের দামও তুলনামুলক কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এরমধ্যে সাপাহার উপজেলায় রয়েছে ৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর আমবাগান। আম বাগানকে কেন্দ্র করে সাপাহার উপজেলা সদরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আমের বাজার গড়ে ওঠেছে। যেখানে প্রায় দেড় শতাধিক আমের আড়ত রয়েছে। যেখানে চালু রয়েছে প্রায় ৫০টির মতো আড়ত।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় চলছে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন। আগামী ৯ জুন পর্যন্ত এ লকডাউন থাকবে। আর এ কারণে বাইরের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এতে দাম তুলনামূলক কম রয়েছে বাজারে।
সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাপাহারের বাজারে গুণগত মানভেদে গোপালভোগ ১২০০-১৪০০ টাকায়, খিরসাপাতা প্রতিমণ ১১০০-১৬০০ টাকায় ও নাগফজলি বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ১৩০০-১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৯০০ টাকা দরে।
সাপাহারের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমচাষি শামিম আহমেদ খোকন বলেন, ‘বাজারে হিমসাগর আম বিক্রি করতে এসেছি। বাজারে আমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। আমরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। আর এ দামে আম বিক্রি করলে লাভবান হতে পারবো না। যে দামে বিক্রি করছি ব্যবসায়ীরা বাইরের জেলায় এগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিতে হয়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশকও বেশি দিতে হয়েছে। ফলে আম উৎপাদনে খরচও বেশি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বাজারে না আসা পর্যন্ত আমরা ন্যায্যদাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবো’।
পোরশা উপজেলা থেকে আসা আমচাষি আবুল কালাম বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে চার মণ গুটি আম নিয়ে এসেছি বাজারে। কিছুক্ষণ পরই ৪৭০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে দিয়েছি সেগুলো। বাজারে গুটি আমের চাহিদা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা আসলে আরো বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম’।
সাপাহারের আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এ উপজেলায় আমের মূল ব্যবসায়ীরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাটসাট ও ভোলাহাট উপজেলার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আবার আড়তে কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরও করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যে কয়েকটি আমের মোকাম রয়েছে সবগুলোতে একইসঙ্গে আম বাজারে উঠেছে ও মোকামগুলো চালু হয়েছে। একারণে ব্যবসায়ীরা এখনো আসা শুরু করেনি বাজারে। বাজারে আম বেশি থাকলেও ক্রেতা কম রয়েছে। ফলে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না’।
নদী বন্দর / এমকে