সোনালি আঁশে ফিরেছে সুদিন। গত মৌসুমে পাট কাটা শুরুর দিকে মণপ্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও শেষ দিকে তা দাঁড়িয়েছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। দেশের ইতিহাসে এমন সর্বোচ্চ দাম এই প্রথম বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত মৌসুমে পাট চাষে দাম বেশি পাওয়ায় এবারও সোনালি আঁশ চাষে খুব বেশি ঝুঁকেছেন চারঘাটের কৃষকেরা। চারঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র বলছে, গত মৌসুমে ১৬০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও এবার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করছেন কৃষকরা। পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবার কৃষকরা পাট চাষে বেশি ঝুঁকেছেন।
চারঘাটের কৃষকদের বরাত দিয়ে উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ জানান, চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটের বীজ বপন করেছেন কৃষকরা। কৃষকেরা প্রথমদিকে ডেপ, পটাশ ও গোবর ছিটিয়ে পাটের চাষের জমি তৈরি করছেন। পরবর্তীতে ২০ থেকে ২৫ দিন নাগাদ গাছ একটু বড় হওয়ার পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেছেন।
দুই থেকে আড়াই মাস পর যখন পাট পরিপক্কতা লাভ করবে এবং তাতে আঁশযুক্ত হবে, সেই পরিপক্কতা লাভের পরই তারা পাট কাটা শুরু করবেন। পাট কাটার পর তা আঁটি বেঁধে ডোবায় জাগ দেবেন।
চারঘাট পৌর এলাকার পাট চাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘নিজের জমিতে প্রতি বছরই আমি পাট চাষ করে থাকি। গত কয়েক বছর যাবৎ পাটের দাম ভালোই যাচ্ছে। গতবার পাটের দাম পেয়েছি সর্বোচ্চ। এবার প্রথম থেকে বৃষ্টিও হয়েছে আবার আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই এ বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ শুরু করছি।’
এদিকে সরদহ এলাকার কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করছি। জমিতে গাছ ভালো হয়েছে। বর্ষার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া গেছে। তাই আশা করছি এবার বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ পাট ঘরে তুলতে পারব।’
চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার খন্দকার ফিরোজ মাহমুদ জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হওয়ায় পাটের জমিগুলো পেয়েছে পর্যাপ্ত পানি। কারণ পাট চাষে বর্ষার পানি একটি বড় ধরনের উপকরণ। মাটিতে পর্যাপ্ত পানির প্রাপ্যতা থাকায় আশা করা যাচ্ছে এবার পাট বেশ ভালোভাবেই বেড়ে ওঠবে। এছাড়াও পাট জাগ দিতেও পানির অভাব হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পাটের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া গত পাঁচ বছর যাবৎ পাটের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গতবারে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে পাট, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। তাই সবমিলিয়ে এই মৌসুমে পাট চাষে লাভবান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে চারঘাটের কৃষকদের।
নদী বন্দর / বিএফ