মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ও জামির্ত্তা ইউনিয়নে তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে গেছে কৃষকের শত শত একর জমির ধান। ধানে দেখা দিয়েছে চিটা।
ধার-দেনা করে হাল, সার, বীজ দিয়ে চাষ করে ধান ঘরে তুলতে না পারায় কৃষকের মাথায় হাত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ঘুরছেন সাহায্যের আশায়। তিন ফসলি জমিতে স্থাপিত ইট ভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ সভাও করেছেন কৃষক। কিন্তু ভাটা বন্ধ হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যাচাইবাছাইয়ে অনেকের নাম বাদ দিয়ে তালিকা তৈরি ও ক্ষতিপূরণ কম দেওয়া এবং তালিকায় নাম গেলেও টাকা পায়নি এমন অভিযোগ রয়েছে। ইটভাটার মালিকরা মানছেন না কোনো নিয়মনীতি। চান্দহরের রিফাইতপুর, চালতাপাড়া চকের কৃষক ফজলুল হক, কলিম মেম্বার, এখলাছ উদ্দিন ও মজিবর রহমান জানান, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় দেড় শ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া এবারে যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তার বদলা পাননি তারা।
ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ভাটা মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করে সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তার ইউনিয়নে তিন ফসলি জমিতে এসব ইটভাটার ট্রেড লাইসেন্স কিংবা ডিসির অনুমতি পত্রও নেই। অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে বর্তমান প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এরা কোনো আইন মানছে না।
আবুল হোসেন ও প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন, কৃষকদের কথা না ভেবে ইউপি চেয়ারম্যান ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকেন। ফলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে কৃষকদের অংশ গ্রহণে বাধা দেন তিনি। আগামী শুক্রবার আবারও মানববন্ধন করবেন তারা। এতেও কাজ না হলে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে ।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম রাজু বলেন, কোনো কৃষককেই ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। এ ছাড়া ভাটা মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। জমির্ত্তা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ও সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আগের স্কুল কমিটির সমঝোতায় স্কুলের জমিও রয়েছে ইটভাটায়। বর্তমানে ঐ জমির ফসল এবং ভাটা মালিকের কাছ থেকে কোনো টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন বলেন, ধান পুড়ে যাওয়া কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এতে কারো নাম বাদ দেওয়া হয়নি। তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা নয়, তা পরিবেশ অধিদপ্তর দিয়ে থাকে। পরিবেশ অধিপ্তরের জেলা উপপরিচালক নুর আলম বলেন, ‘আইনে আছে এক ফসলি কিংবা পতিত জমি ছাড়া ইটভাটা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কৃষি কর্মকর্তা বরাবর চিঠি ইস্যু করা হয়। কৃষি কর্মকর্তা এক ফসলির বিষয় অনুমোদন দিলেই কেবল পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমরাও দেখি তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা।
নদী বন্দর / এমকে