1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
বাণিজ্যিকভাবে থাই কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি - Nadibandar.com
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
  • ১২৯ বার পঠিত

আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই কৈ মাছ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছ হিসেবে পরিচিত। এক সময় বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওড় ও প্লাবন ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে কৈ মাছ পাওয়া যেত।

আবহমানকাল থেকে আমাদের দেশে জীয়ল (মাছ ঘরের পাত্রের পানিতে জীবন্ত মাছ রাখার পদ্ধতি) মাছ হিসাবে কৈ মাছকে অতিথি আপ্যায়নের জন্য আন্তরিকতা ও সম্মানের বলে বিবেচিত।

সে সময় এ মাছ যেমন সহজলভ্য ছিল তেমনি এর দামও ছিল ক্রয়সীমার মধ্যে। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কারণে অন্যান্য মাছের সঙ্গে কৈ মাছও তার পূর্বের অবস্থানে নেই। তবে এর সার্বজনীন চাহিদা ও মূল্য সব সময়ই আভিজাত্য বজায় রেখে চলেছে।

সেই বিবেচনাতে কৈ বিশেষত থাই কৈয়ের বাণিজ্যিক চাষ একটি লাভজনক প্রকল্প হিসাবে বিবেচতি হয়ে থাকে। তাই বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে থাই কৈ চাষ করে যে কেউ হতে পারেন একজন সফল খামারি।

jagonews24

যে কারণে তাই কৈ চাষ করবেন

* চাহিদা সব সময় বেশি বলে এর মূল্য তুলনামূলকভাবে সব সময় বেশি থাকে।
* বিরূপ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং মৃত্যুর হার খুবই কম।
* অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
* ছোট পুকুর বা খাঁচায় চাষ করা সম্ভব।
* তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ে অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়।
* অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বছরে একাধিকবার চাষ করা যায়।
* রোগবালাই নেই বললেই চলে।
* তুলনামূলক অল্প পঁজিতেই চাষ করা সম্ভব।
* ফর্মুলা অনুযায়ী নিজ ঘরের কৈ-এর পিলেট তৈরি করা সম্ভব।
* কৈ মাছ মূলত কীট-পতঙ্গ খায়। একারণে পোকামাকড়, ছোট মাছ, ব্যাঙের পোনা, শামুক, ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি সরবরাহ করে এ মাছ চাষ করা যায়।

থাই কৈ মাছ চাষ করবেন যেভাবে

থাই কৈ এবং আমাদের দেশীয় কৈয়ের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই বললেই চলে। তবে থাই কৈ সাধারণগত দেশি কৈয়ের চেয়ে চ্যাপ্টা এবং এর শরীরের পিছনের দিকে কিছু কালো দাগ থাকে। এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল। একে পুকুর বা খাচাঁয় (কেজ কালচার) চাষ করা সম্ভব। তবে, পুকুরে চাষ করাই বেশি লাভজনক।

যেভাবে পুকুর নির্বাচন চাষের প্রস্তুতি নেবেন

jagonews24

পুকুর রৌদ্র আলোকিত খোলামেলা জায়গায় হাওয়া উত্তম এবং পাড়ে ঝোপ-জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে সেগুলোর ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পড়া নিশ্চিত করতে হবে। থাই কৈ চাষের জন্য তুলনামূলকভাবে ছোট পুকুর বিশেষভাবে উপযুক্ত।

পুকুরের আয়তন ২০ থেকে ৩০ শতকের মধ্যে হওয়াই ভালো। এতে করে ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়। পুকুরের গভীরতা বেশি না হয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট হওয়া উত্তম। প্রথমে পুকুরটি সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরে অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে কারণ অতিরিক্ত কাদা পুকুরে গ্যাস সৃষ্টি করে যা পুকুরের শুকানোর পর তলার মাটি রৌদ্রে ফেটে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তারপর সেখানে আড়াআড়িভাবে ২টি হালের চাষ দিতে হবে। তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি (দালান-কোঠা নির্মাণের জন্য বালু ব্যবহৃত হয়) ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভালো থাকবে।

চুন এবং সার প্রয়োগ

আড়াআড়িভাবে ২টি হালের চাষ দেয়ার পর প্রতি শতাংশ ১ কেজি হিসাবে পাথুরে চুন (আগের দিন গুলিয়ে রেখে পরের দিন) পুকুরের পাড়সহ সর্বত্র এমনভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে যেন মনে হয় সমগ্র পুকুরটি সাদা কাপড়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে। চুন প্রয়োগের ৩-৫ দিন পর প্রতি শতাংশ ৫ কেজি পচা গোবর অথবা ৩ কেজি মুরগির বিষ্ঠা ছিটিয়ে দিতে হবে। জৈব সার প্রয়োগের ২-৩ দিন পর পুকুরে ৪-৫ ফুট পানি প্রবেশ করাতে হবে।

পানি প্রবেশ করানোর পর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি গুলে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগের ৫ থেকে ৭ দিন পর পুকুরে থাই কৈ-এর পোনা মজুদ করতে হবে। অন্যদিকে পুকুরে যদি পানি থাকে কিংবা কোনো কারণে পুকুর শুকানো সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে পুকুরে যেন রাক্ষুসে মাছ না থাকে, তা প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে।

jagonews24

সেজন্য প্রয়োজনমত রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে। পুকুর জলজ আগাছা এবং রাক্ষুসে মাছ মুক্ত করার পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি পাথুরে চুন গুলিয়ে পাড়সহ পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫ কেজি পঁচা গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি গুলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পানি হালকা সবুজ হলে থাই কৈ-এর পোনা অবমুক্ত করতে হবে।

পুকুরে বেষ্টনি প্রদান এবং পোনা অবমুক্ত

কৈ এমন একটি জীয়ল মাছ যার অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ আছে। তাই বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে সক্ষম হওয়ায় পানির উপরে এরা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। বৃষ্টির সময় এরা কানকুয়া ব্যবহার করে অতি দ্রুত চলতে পারে।

সেজন্য যে পুকুরে কৈ-এর চাষ করা হবে তার পাড় অবশ্যই নাইলনের ঘন জাল দিয়ে ঘিরতে হবে। নয়তো পুকুরে খুব কম পরিমাণ কৈ পাওয়া যাবে। ছোট ফাঁসযুক্ত জাল দিয়ে পুকুরটি ভালোভাবে ঘেরার পর পুকুরে প্রতি শতাংশে নার্সিংকৃত এক থেকে দেড় ইঞ্চি মাপের ৩০০ থেকে ৩২৫ টি কৈয়ের পোনা মজুদ করতে হবে।

jagonews24

খাদ্য ব্যবস্থাপনা

থাই কৈ একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। সেজন্য পর্যাপ্ত খাবার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা দুইভাবে করা যেতে পারে।

প্রথমত: রাফ খাবার ব্যবস্থাপনা এবং
দ্বিতীয়ত: গুণগত মানসম্পন্ন বাণিজ্যিক খাবার ব্যবস্থাপনা।

রাফ খাবার ব্যবস্থাপনা:

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, রাফ খাবার ব্যবস্থাপনায় দক্ষ না হলে কৈ-এর বৃদ্ধি অনেক সময় ভালো নাও হতে পারে। এটি মূলত দরিদ্র মৎস্য চাষিদের প্রাথমিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে শামুক বা ঝিনুকের মাংস, ব্যাঙের পোনা, গরু বা মুরগির নাড়িভূড়ি কিংবা ফিসমিল (নিয়মিতভাবে নয়), কুড়া, ভুষি, খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে কোনো একটি খাবার নিয়মিত ব্যবহার করে অন্যগুলো আংশিক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

উন্নত রাফ খাবার হিসাবে ফিসমির ২৫%, কুড়া ৩০%, খৈল ২৫% এবং ভুষি ২০% একত্রিত করে বল অথবা পিলেট আকারে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়ায় সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র খৈল বাদে অন্য উপাদানগুলো উল্লেখিত অনুপাতে বেশি পরিমাণে মিশ্রিত করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে।

তারপর প্রতিদিন মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী যে পরিমাণ খাদ্য হবে তার তিনভাগ তৈরিকৃত মিশ্রণ থেকে এবং অন্য একভাগ খৈল পানিতে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তার মধ্যে উক্ত মিশ্রণ মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে নির্দিষ্ট ৪ থেকে ৫টি জায়গায় প্রতিদিন প্রদান করতে হবে।

jagonews24

যে সকল জায়গায় খাদ্য দেয়া হবে সে সকল জায়গা বাঁশের খুঁটি পুতে চিহ্নিত করা উচিত। এছাড়া অন্যান্য রাফ খাবার যেমন- শামুক, ঝিনুকের মাংস, মুরগি ও গুরুর ভুড়ি ইত্যাদি পরিমাণমত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো ক্রমেই যেন পানি নষ্ট না হয়।

তবে কেই যেহেতু কীট ভোজী মাছ সেজন্য পর্যাপ্ত দৈহিক বৃদ্ধির জন্য পানির ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উপরে রাত্রে একাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালালে সেখানে প্রচুর কীট-পতঙ্গ আসবে এবং উড়তে উড়তে এক পর্যায়ে পানিতে পড়ে যাবে যা কৈয়ের তাৎক্ষণিক খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হবে।

এছাড়া রাফ খাবার হিসাবে কম দামি মাছ যেমন ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কাপ, বড় আকৃতির আফ্রিকান মাগুর, ফার্মের মৃত মুরগি কিংবা গরুর মাংসের ছোট ছোট টুকরো (কৈ খেতে পারে সে রকম টুকরো) করে সরাসরি দেয়া যেতে পারে অথবা সেগুলো রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ পূর্বক প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হালকা সিদ্ধ করে দিতে হবে কিংবা কমপক্ষে পানিতে দুই এক ঘণ্টা ভিজিয়ে তারপর দেয়া উচিত। হালকা সিদ্ধ করে দিলে দৈহিক বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়ে থাকে।

গুণগতমান সম্পন্ন বাণিজ্যিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা

বাণিজ্যিভবে নিয়মিত কৈয়ের উৎপাদন পেতে হলে গুণগতমান সম্পন্ন পিলেট খাবার প্রদান করা উচিত। এক্ষেত্রে বাজার থেকে কৈয়ে জন্য তৈরিকৃত পিলেট খাবার (প্রোটিনের পরিমাণ ৩০%৩৫) অথবা যদি তা না পাওয়া যায় তাহলে চিংড়ির জন্য তৈরি খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে।

নদী বন্দর / সিএফ

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com