দল ও মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। রোববার (১৩ জুন) দুপুর ১২টায় ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নিজেই এ তথ্য জানান।
কাদের মির্জা বলেন, ‘আজকে (রোববার) আমার জীবনে হয়তো জনপ্রতিনিধি বা পৌরসভার মেয়র হিসেবে শেষ দিবস। তাই কয়েকটি কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা আমার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনবেন।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আজ সকাল ৯টার দিকে মোবাইলে একটা কল পেয়েছি। নোয়াখালীর একজন ত্যাগী নেতা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে নাকি বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বড়ভাই সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উনাকে বলেছে তিনি (ওবায়দুল কাদের) গত কালকে (শনিবার) নাকি আমাকে বহিষ্কারের জন্য নেত্রীকে অনুরোধ করেছেন। এরপর নেত্রী নাকি ওই নির্দেশ দিয়েছেন।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘তবে আমি খবর নিয়ে জেনেছি ওবায়দুল কাদের নেত্রীকে বলেছেন আমাকে (ওবায়দুল কাদের) সরিয়ে দিন। আমি এভাবে দল ও সরকারের দায়িত্ব পালন করতে পারব না। ছোট ভাই কাদের মির্জা আমাকে (ওবায়দুল কাদের) অপমান করেছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছে সেটা তোমার পারিবারিক বিষয়, তুমি দেখ। এখন তিনি মিথ্যাচার করছেন আমাকে (কাদের মির্জা) নাকি বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘সকালে এ কথা জানার পর আমি পৌরসভার দাফতরিক সকল দস্তখত দিয়ে শেষ করেছি। নেত্রীর নির্দেশ পেলে দল এবং পৌরসভার পদ থেকে বিদায় নেব। নেত্রী ব্যস্ত মানুষ তিনি হয়তে সময় পাবেন না, তবে সঙ্গে যারা থাকেন তাদের কেউ মেসেজ দিলেও হবে।’
তিনি বলেন, ‘দল থেকে বিদায় নিলেও পৌরসভায় একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের অফিস করেছি। বহিষ্কারের পর সেখানে বাধা দিলে বা বসতে না দিলে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে গিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জয়গান গাইবো।‘
কাদের মির্জা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে আমি কিসের অপমান করেছি? তার সাথে দেখা করেছি, বললেন ‘শান্ত থাক’। এর দুইদিন পর উনার ভাগিনার নেতৃত্বে আমার ৯ জন ছেলেকে গুলি করা হলো। কোনো বিচার পাইনি।’
মেয়র দাবি করেন, ‘আমি কেন? কোম্পানীগঞ্জের একটা পাগলও বলবে গত পাঁচমাস এখানকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ওবায়দুল কাদেরই দায়ী। এটা বলা অপরাধ হলে আমাকে বহিষ্কার করে দিন।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছে আমি লোকজনকে কত শান্ত করে রাখব। আমার সাথে যত ওয়াদা করেছেন একটাও পালন করেননি ওবায়দুল কাদের।’
তিনি বলেন, ‘আপনার (ওবায়দুল কাদের) বউয়ের কিচ্ছা আবুল ফজল লিখলেও শেষ করতে পারবে না। তিনি (ইসরাতুন্নেছা কাদের) কোথায় কোথায় রাত্রে থাকেন, দেশের বাইরে গিয়ে কোন কোন দেশে কি কি করেন সব আমি জানি। সেটা পরে আরেকদিন বলব।’
কাদের মির্জা বড়ভাই ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আপনি যাদেরকে নমিনেশন দেন তারা কে কি করে তাদের সেই চেহারাটা কি আপনি দেখেছেন? যাদের কোনো অতীত নেই, তাদেরকেই নমিনেশন দেন আপনি।’
এ সময় কোম্পানীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদে নিজের ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকা বাতিল ঘোষণাও করেন কাদের মির্জা।
তিনি বলেন, ‘এ ঘোষণা দেবেন একমাত্র শেখ হাসিনা। তিনি যাদেরকে মনোনয়ন দেবেন তারা যদি যোগ্য হয় তাহলে তাদের পক্ষে কাজ করবেন তিনি।’
এদিকে বহিষ্কার হলে পৌরসভার পরবর্তী উপ-নির্বাচনে আবারো দাঁড়িয়ে নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করবেন বলেও জানান আলোচিত এ মেয়র। যদিও এর আগে স্থানীয় সরকারের আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।
নদী বন্দর / এমকে