বাড়ির পাশেই ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে ভালোই চলছিল নিপু ত্রিপুরার সংসার। মাঝপথেই করোনায় হোঁচট খান তিনি। করোনা মহামারিতে আর্থিক সঙ্কটে পড়েন এ নারী। স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বিকল্প কোনো আয়ের পথ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন।
করোনাকালে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে নিজের মোবাইল ফোনে ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখতে শুরু করেন। হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ে মাশরুম চাষের ভিডিও। ভিডিও দেখেই মাশরুম চাষের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির পর খাগড়াছড়ির খবংপুড়িয়ার ‘উলবাবু মাশরুম সেন্টারে’ স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। মাশরুম চাষ শুরুর পরে মাগুরায় ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদন শুরু করেন এই নারী উদ্যোক্তা।
আগ্রহ আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোড়ে মাশরুম চাষ শুরুর এক বছরের মধ্যেই সাফল্য স্পর্শ করেছেন খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়া এলাকার নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা। মাশরুম চাষ থেকে এক বছরে আয় করেছেন নয় লাখ টাকা। যা করোনা মহামারিতে অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন নিপু ত্রিপুরা।
ঠাকুরছড়া এলাকায় নিজের বাড়িতেই নিপু ত্রিপুরা দুই হাজার পেকেট দিয়ে মাশরুম চাষ করেন। যা থেকে প্রতি দুই মাসে দেড় হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ শেষে প্রতি দুই মাসে দেড় লাখ টাকার মতো লাভ হয় তার। এমন তথ্য জানিয়ে নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা বলেন, মাশরুম চাষ শুরুর এক বছরের মধ্যেই আমি প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি।
শুরুতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বীজ ক্রয় করে মাশরুম চাষ করলেও বর্তমানে নিজেই বীজ তৈরি করে চাষের পাশাপাশি বিক্রি করা শুরু করেছেন নিপু ত্রিপুরা। মাশরুমের পাশাপাশি বীজেরও চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভিডিও দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হওয়ার কথা জানিয়ে নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা বলেন, মাশরুম খুব লাভজনক চাষ। যত্ন নিলে সারাবছর কমবেশি ফলন পাওয়া যায়। মাশরুম চাষে নিজের ভাগ্যবদলের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগ্রহ আর অদম্য ইচ্ছা শক্তি আমাকে সফল করেছে। সরকারি প্রকল্প পেলে বেকারদের বিনা মূল্যে মাশরুম চাষ পদ্ধতি শেখাবেন বলেও জানান সফল নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা।
নিজের মাশরুম চাষে আরো পাঁচ নারীকে কাজ দিয়েছেন নিপু ত্রিপুরা। এখানে কাজ করেই সংসার চলে তাদের। সেখানেই কাজ করেন সাদিকা ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন জনের কাজ করেই আমাদের সংসার চলতো। কিন্তু প্রতিদিন কাজ পাওয়া যেত না। ফলে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। এখানে প্রতিদিনি কাজ করি। যা পাই তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যাচ্ছে। আপন বালা ত্রিপুরা বলেন, করোনা মহামরিতে যখন কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম তখন এখানে কাজের সুযোগ পাই। এ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করি। যে পারিশ্রমিক পাই সেটা দিয়ে পরিবারের বাড়তি খরচা দিতে পারি।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, মাশরুম খুবই লাভজনক একটি চাষ। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে কম পুঁজিতে ভালো লাভ করা যায়। সবজি হিসেবে মানুষের মধ্যে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়।
বাজারে মাশরুমের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেশি। মাশরুম চাষে মানুষ আগ্রহী হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড় থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা যাবে। এখানকার মানুষের আর্থিক সংস্থান হবে।
নদী বন্দর / বিএফ