দেশের ‘মেগা প্রকল্পগুলোতে এখন গণলুট চলছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (২০ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমাজ উন্নয়নে মৃত্যুঞ্জয়ী জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, লুট করছে। তারা দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে একজন এই মেগা প্রজেক্টের কথা বললেন। মেগা প্রজেক্টে গণলুট চলছে এখন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এভাবে মেগা প্রজেক্টটাকে তারা টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসেবে তৈরি করে নিয়েছে।’
অনুন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আনপ্রোডাক্টিভ খাতে টাকা দেয়া হচ্ছে। এমন কাজ করা হচ্ছে যে, কাজগুলোর কোনো দরকারই নেই। দেখবেন যে, স্কুলে-মাদরাসায় টাকা দিয়েছে বড় বড় গেইট তৈরি করতে। এই মুহূর্তে তো গেইট তৈরি করার চেয়ে ক্লাস রুম তৈরি করা বেশি দরকার। সেটা তারা করছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে কী করুণ অবস্থা! এখন পর্যন্ত টিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং টিকার নিশ্চয়তা হবেও না এজন্য যে, যারা স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে জড়িত, টিকার সঙ্গে জড়িত- এরা সবাই দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই, এখানে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন ভয়াবহ সব খুন, ভয়াবহ সব হত্যার ঘটনা। আজকের পত্রিকায় যে ঘটনাটি এসেছে যে, মেয়ে বাবা-মা-বোনকে হত্যা করেছে। এগুলো হচ্ছে- একটা আর্থসামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।’
‘এটার কারণ হচ্ছে– আজকে দেশের মধ্যে গণতন্ত্র নেই। যেহেতু দেশে গণতন্ত্র নেই, যেহেতু দেশে সেই সমাজ ব্যবস্থা নেই, যেহেতু দেশে জবাবদিহিতা নেই। আজকে অবস্থাটা এমন একটা পর্যায় চলে গেছে যে, এ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র দায়িত্ব বিএনপিরই রয়েছে।’
কৃষকদের দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কৃষকরা আজ কঠিন সমস্যায় জর্জরিত। তারা উৎপাদন করছে কিন্তু তাদের পণ্য বাজারজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। অনেকদিন আগে পত্রিকায় উঠেছে, গাইবান্ধায় এক কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বলছেন, আমি এই যে এতো সবজি উৎপাদন করলাম, সেগুলো তো বাজারে দিতে পারছি না। সরকার কী পারে না আমাদের সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলোকে পাঠিয়ে এসব সবজি ঢাকায় এনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে। তার কথাটা ছিল এ রকম।’
‘গাইবান্ধার ওই কৃষকের মুখ দিয়ে কৃষকদের সমস্যার খুব সত্য কথাটা বেরিয়ে এসেছে। সরকার এতো কিছু করছে আমাদের কৃষিপণ্যের বাজারজাত করছে না কেন? এটা জরুরি বিষয় বলে আমার কাছে মনে হয়।’
এ সময় তিনি জিয়াউর রহমানের আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকদের কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ অন্ধকার চতুর্দিকে। বাইরে কিছু দেখতে পাই না। এর মধ্যে জিয়াউর রহমান খুব প্রাসঙ্গিক। এজন্য যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের আদর্শ যদি আমরা চর্চা করি, তাকে যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি, নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেই তাহলে আমরা তার পথ দেখতে পাব। তাতে আমরা অন্ধকার টানেলের দূরে যে লাইট সেই লাইটটা দেখতে পাব। তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষা-বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গোলাম হাফিজ কেনেডী, জামাল উদ্দিন রুনু, লুতফুর রহমান, তোজাম্মেল হোসেন, হাসনাত আলী, মাসুদুল হাসান খান, কামরুল হাসান, আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, জিয়া পরিষদের মহাসচিব এমতাজ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।
নদী বন্দর / সিএফ