বর্ষা মৌসুমে শাক-সবজি উৎপাদনে ঝালকাঠি জেলার ৩৬ গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা কাঁকরোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, তিতা করলা, শসা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, পাটশাক, শসা, কাঁচকলা, বেগুন, পেঁপে, পানিকচু, কচুশাক, কচুর লতি, পটল, চালকুমড়া ইত্যাদি চাষ করে অধিক ফলনের আশা নিয়ে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
আগাম সবজি বেশি দামে বিক্রি করে আশাতীত আয় করার স্বপ্নও দেখছেন চাষিরা। সবজি চাষিদের অনেকে এক ফসলী জমিতে তিন ফসল চাষ করে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাচায় এ ঝুলছে তিতা করলা, কাঁকরোল, বরবটি, চালকুমড়া, পুঁইশাক, শশা, ঝিঙা, চিচিঙা, আর মাচার নিচের রসালো মাটিতে কচুর মুড়া। এ ধরণের সবজি চাষ করে উপজেলার অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন।
অনেক চাষি সবজি চাষ করে সাংসারিক খরচ মিটিয়ে বাড়তি কিছু সঞ্চয়ও করছেন। উৎপাদন খরচ ও শ্রম কম হওয়ায় এ ধরনের সবজি চাষ চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কয়েক বছর আগেও যাদের সংসার চলতো ধার-দেনা করে। আজ আগাম সবজি চাষ করে তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলার উপ-সহকারী কর্মকর্তার পরামর্শে এক ফসলি জমি বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যে জমিতে আগে মাত্র একবার ফসলের চাষ করা হত এখন সে জমিতে ১২ মাস রবি মৌসুমে (শীতকালীন), খরিপ-০১ (গ্রীষ্মকালীন) ও খরিপ-০২ (বর্ষাকালীন) উৎপাদিত হচ্ছে নানা জাতের শাক-সবজি।
সবজি চাষি মো.ইউসুফ জানান, তিনি ৬০ শতক জমিতে জমিতে শসা ও ১০ শতক জমিতে কাঁকরোল চাষ করেছেন। এ দু’ধরনের সবজি চাষে তার মোট খরচ হয়েছে ৮২ হাজার টাকা । তার ক্ষেতের ফলনও হয়েছে ভালো। এ পর্যন্ত তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শসা ও কাঁকরোল বিক্রি করেছেন। ক্ষেতের সমস্ত শসা ও কাঁকরোল বিক্রি করতে পারলে আরো ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
সরকারিভাবে কৃষিঋণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সরকারি ঋণ পাননি। একই ইউনিয়নের কাঁকরোল চাষি সমশু ও নুরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ৪০ শতক জমিতে শসা ও ১০ শতক জমিতে কাঁকরোল চাষ করেছি।
প্রথম দিকে (রমজানে) প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে ১০ মণ শসা ও ৬০ টাকা দরে ২ মণ কাঁকরোল বিক্রয় করেছি। আবাহাওয়া ভালো থাকলে ও ক্ষেতের সব কাঁকরোল বিক্রি করতে পারলে আরো ১ লাখ টাকা অতিরিক্ত আসতে পারে বলে তারা জানান।
কৃষক পঙ্কজ বড়াল জানান, ডুমুরিয়া গ্রামে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে কাঁদি কেটে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন তিনি। সেখানে পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কলা, কচু, ঝিঙা, চিচিঙা, পাটশাক, পুঁইশাক, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি উৎপাদন করেন তিনি। রাসায়নিক ও জৈবসার দিয়ে আবাদি কৃষিতেও বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন বলে খুশির হাসি দেন পঙ্কজ বড়াল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক জানান, ঝালকাঠির সবজি চাষে মডেল গ্রামগুলোয় প্রণোদনা ও পরামর্শ দেয়াসহ নানাভাবে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে আসছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আমরা যতদূর সম্ভব মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।
যে সমস্ত সবজি চাষি ক্ষেতের রোগ বালাই এর ব্যাপারে আমাদের নিকট আসেন তাদেরকে সাধ্যমত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকি। সবজি চাষিরা প্রতিবছরই ৩টি মৌসুমে ভালোমানের সবজি উৎপাদন করে থাকে।
নদী বন্দর / পিকে