বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের রূপনগর এলাকায় ২৭টি পরিবার। নিচু জায়গায় নির্মিত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে ঘরগুলোর চারপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টিউবওয়েল আছে তাও নষ্ট। যেগুলো সচল আছে সেগুলোর পানিতে চরম দুর্গন্ধ। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই সরকারি এ আবাসন প্রকল্পের সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তা থেকে প্রায় ৪-৫ ফুট নিচু জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। কাদার মধ্যেই যাতায়াত করছেন ঘরের বাসিন্দারা। পানির দুর্ভোগের সঙ্গে সাপ, পোকা-মাকড়ের ভয়ে রাত কাটাচ্ছেন অসহায় মানুষগুলো। অনেকেই নিজ অর্থায়নে মাটি কেটে নিচু জায়গা ভরাট করার চেষ্টা করছেন।
সুবিধাভোগী কাউছার মিয়া বলেন, ‘তার কোনো জমিজমা নেই। প্রধানমন্ত্রী তাকে ঘর করে দিয়েছেন। কিন্তু যে জায়গায় ঘর তৈরি করা হয়েছে সেখানে একটি কবরস্থান ছিল। এছাড়া টিউবওয়েল দিয়েও পানি উঠে না। দু-একটি দিয়ে পানি উঠলেও দুর্গন্ধ, খাওয়া যায় না।’
এলাকাবাসী জানান, যে জায়গাটির ওপর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেটি সরকারি জমি। কিন্তু এলাকাবাসী গত কয়েক বছর যাবত জায়গাটিকে কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এখন লোকেরা কবরস্থানের ওপর বসবাস করছেন।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে প্রথম পর্যায়ে বাঘাসুরা ইউনিয়নের রূপনগর এলাকায় গৃহহীন ২৭টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৪৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে গৃহহীনদের মাঝে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এখানে কোনো কবরস্থান নেই এবং খাস জমি থাকায় ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।’
নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ বিষয়ে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নিয়ে এখানে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এরইমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছে। কিছু পানি জমে ছিল, সেটির জন্য দ্রুত একটি ড্রেন করে দেয়া হয়েছে। পানির সমস্যার জন্য নতুন টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে।’
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি জানেন কীভাবে দিয়েছেন। তবে আমার জানামতে এটির একটি প্ল্যান লেভেল থাকে, পানি বের হওয়ার পথ আছে কিনা এসব দেখেই করে থাকে। আমাদের মতামত নিলে আমরা এসব দেখে মতামত দিয়ে থাকি। এছাড়া নিচু জায়গায় ঘর নির্মাণ করা কোন ক্রমেই হতে পারে না।’
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও গৃহ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব তওহীদ আহমদ সজল বলেন, ‘জায়গাটি কবরস্থান সেটি আমার জানা নেই। এছাড়া জমি নিচু সেটি সমস্যা না। এখানে বন্যা হয় না। কিন্তু অতিবৃষ্টি হলে সেখানে পানি জমে। তার জন্য ড্রেন করে দেয়া হয়েছে। আশা করছি পানি নেমে যাবে। আর টিউবওয়েলের জন্য দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি এটিরও সমাধান হয়ে যাবে।’
নদী বন্দর / জিকে