চিকিৎসকের কাছে গেলেই রোগীর জিহ্বা দেখতে চায়- কখনও ভেবে দেখেছেন কেন একজন চিকিৎসক রোগীর জিহ্বা পরীক্ষা করেন? আসলে জিহ্বার রংয়ের পরিবর্তন হয়েছে কি-না সেটিই পরীক্ষা করেন চিকিৎসক। কারণ জিহ্বার রং বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে সাদা, লাল বা ফ্যাকাশে হতে পারে।
একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের জিহ্বার রং হওয়া উচিত গোলাপি। তবে শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বদলে যেতে শুরু করে জিহ্বার রং। এক্ষেত্রে রং পরিবর্তনসহ জিহ্বায় দাগ, ঘা, ফুলে ওঠা বা ব্যথাও বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। চলুন তবে জেনে নিন আপনার জিহ্বার রং শারীরিক কোন সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে-
১. সাদা জিহ্বা
জিহ্বায় সাদা প্রলেপ পড়া ভালো লক্ষণ নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত দেয়। যেমন-
ওরাল ক্যান্ডিডিয়াসিস
ছত্রাক ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস বৃদ্ধি পেলে জিহ্বায় ফাঙ্গাসের মতো সাদা প্রলেপ পড়ে। যাকে বলা হয় মাউথ ট্র্যাশ। অনেকেই মনে করেন, ময়লা জমার কারণে জিহ্বা সাদা হয়েছে। আসলে এটি ছত্রাক সংক্রমণের ফলে হয়। মুখের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখে সি অ্যালবিকানস ব্যাকটেরিয়া।
তবে যতক্ষণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকঠাক থাকে; ততক্ষণই মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব পালন করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করলে ছত্রাক উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ জিহ্বায় পড়ে সাদা আবরণ।
লিউকোপ্লাকিয়া
লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত মুখের মিউকোসাল টিস্যুতে দেখা যায়। এটি দেখতে ঘন, সাদা বা ধূসর রঙের। যদিও হালকা লিউকোপ্লাকিয়া ততটা গুরুতর নয়। তবে পুরো মুখে যদি এমনটি হয়, তবে তা মুখের ক্যান্সার বা গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে।
ওরাল লিকেন প্ল্যানাস
একটি ইমিউনোলজিকাল প্রতিক্রিয়া, যা মুখের মিউকোসাল ঝিল্লিকে প্রভাবিত করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ওরাল লিকেন প্ল্যানাস দেখা দেয়। এর লক্ষণ হলো- জিহ্বায় ফোলাভাব, সাদা দাগ ও ঘা।
২. লাল জিহ্বা
জিহ্বার রং লাল হওয়া মানেই সেটি পরিষ্কার আছে এবং কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকাশ করছে না, তা কিন্তু নয়। একটি লাল জিহ্বা শরীরের নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতি বা মৌখিক নানা সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যেমন-
বি-১২ এর অভাব
ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে আপনার জিহ্বা লাল দেখাতে পারে। অতএব পুষ্টিকর ডায়েট অনুশীলন অনুসরণ করতে হবে এবং ভিটামিন গ্রহণ বাড়াতে হবে।
জিহ্বায় দাগ
অনেকেরই জিহ্বায় মানচিত্রের মতো দাগ দেখা দেয়। যাকে বলা হয় বেনিং মাইগ্রেটরি গ্লোসিটস। এটি অ্যালার্জি, পুষ্টির ঘাটতি, ডায়াবেটিস বা স্ট্রেসের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হতে পারে।
স্কারলেট ফিভার
এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। যার ফলে জিহ্বার রং বদলে লাল এবং ধূসর দেখায়। স্কারলেট ফিভার হলে জ্বরের সঙ্গে শরীরে লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
এমনকি গলা ব্যথাও হয়ে থাকে। যদি দ্রুত চিকিত্সা না করা হয়, তবে হার্ট, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করে এই রোগ।
কাওয়াসাকি ডিজিজ
শিশুদের উচ্চ জ্বর কিংবা রক্তনালীর প্রদাহ, যা কাওয়াসাকি ডিজিজ নামে পরিচিত। এর ফলে শিশুর জিহ্বা লাল দেখায়।
৩. কালো জিহ্বা
ব্যাকটেরিয়ার কারণে জিহ্বার রং গোলাপি থেকে কালচে হয়ে যেতে পারে। এর মূল কারণ হলো জিহ্বায় লোমের মতো বের হয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যের গুরুতর লক্ষণের ইঙ্গিত দেয় এ ধরনের জিহ্বা। এ ছাড়াও ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার কারণেও জিহ্বার রং কালচে হয়ে যেতে পারে।
বুঝলেন তো, আপনার জিহ্বার রং পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। তাই মুখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন। জিহ্বায় কামড় দেওয়া বা গরম কিছু খেয়ে ফোস্কা ফেলা বাদে, জিহ্বা ফাটা বা দাগযুক্ত দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি আলসার, ক্যান্সার বা ছত্রাকের স্পোরগুলোর ইঙ্গিত হতে পারে।
সুত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
নদী বন্দর / সিএফ