দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও পরিবারের সদস্যর্দে জন্য ১৩ শয্যা বিশিষ্ট একটি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করেছে। এখানে করোনায় আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা করা হবে। পানি ভবণের অভ্যন্তরে পুরানো একটি বিল্ডিংকে সংস্কার করে এই সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। এখান থেকে ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও যৌথ নদী কমিশনের করোনায় আক্রান্ত অন্তত ৭ জন চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়েছেন। আরও ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট, অক্সিজেন সংকট এবং করোনা রোগি ভর্তি নিয়ে নানাধরণের বিড়ম্বনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এই মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন একটি মানবিক ও মহতি উদ্যোগ। যা অন্যান্য মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোর জন্যও অনুকরনীয়।
পানি ভবণে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে ডিজাইন ও সার্কেল-৩ এর পুরানো ভবণটিকে সংস্কার করে গড়ে তোলা করোনা ইউনিটিতে ৫টি হাইফ্লো নোজাল কেনোলা, ২টি ভেন্টিলেশন মেশিন সাপোর্ট, ১টি ডাইলোসিস মেশিন সাপোর্ট এবং ৫টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। রয়েছে ১টি অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন আনানেওয়ার জন্য ১টি পিকআপ ভ্যান। এখানে চীফ কনসালট্যান্ট হিসাবে রয়েছেন ডাক্তার শাহেদ ইমরান। এছাড়াও রয়েছেন ২জন কনসালট্যান্ট, ২জন রেজিষ্টার, ৮জন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, ৪জন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, ১জন নিউট্রেশনিষ্ট, নাসিং সুপারভাইজার ২জন, সিনিয়র নার্স ১৬ জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান ২জন, রেসপেরটরি থেরাপিস্ট ৪জন, রেডিওগ্রাফার ২জন এবং বেয়ারার, ক্লিনার ও আয়াসহ মোট ৬৮ জন এই করোনা ইউনিটে কর্মরত আছেন।
পুরানো ভবণটি সংস্কারসহ ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ১টি পিকআপ ভ্যান, করোনা ইউনিটের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ও ৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় বাবদ মোট সাড়ে কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মাসে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এই টাকা বেতন, অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল, গাউন, পিপিই ক্রয় ও রক্ষনাবেক্ষণ কাজ বাবদ ব্যয় হবে।
জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার পাউবো’র জায়গায় পুরানো একটি ভবণকে সংস্কার করে এই মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- এধরণের সেন্টারের মাধ্যমে রোগির প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা। এতে রোগির জীবনের ঝুঁকি কমবে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে ঢাকায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা করোনাকালীন সময়েও কাজ করার ক্ষেত্রে মনোবল অনেকটাই চাঙ্গা থাকবে। গত ১৭ এপ্রিল এক বৈঠকে সিনিয়র সচিব পাউবো কর্মকর্তাদের এমন ধারনা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেন। ৯ মে’র বৈঠকে এটি চূড়ান্ত রূপ পায় এবং তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন সরকার এবং পরিচালক সমাজকল্যান এমদাদুল হক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবো মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ বলেন, মানুষের অদম্য চেষ্টায় একদিন হয়তো বৈশ্বিক মহামরি কোভিড-১৯ ভাইরাসটি পরাজিত হবে, আর তখন সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পৃথিবীজুড়ে আবার প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হবে। কিন্ত এই স্বাভাবিকতা ফিরে না আসা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড তার সামর্থ দিয়ে একটি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ২০২১ এর ১৫ জুন মেডিক্যাল সেন্টারটি উদ্ধোধন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মতিন সরকার বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পাউবো’তে কর্মরতরা যাতে সেবা পান এজন্যই এই মেডিক্যাল সেন্টারটি করা হয়েছে। এটি একটি জনকল্যানকর প্রকল্প। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এটাকে পূর্নাঙ্গ মেডিক্যালে রূপ দেওয়া গেলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও এর অধিনস্থ সংস্থা সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপকৃত হবেন।
এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এমদাদুল হক বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত আড়াই মাসে পাউবো’র ৪ থেকে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা মেডিক্যাল সেন্টারটি স্থাপন করতে পারায় একদিকে যেমন সেবা দিতে পারছি, অন্যদিকে পাউবো’তে কর্মরতদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির সুযোগ সুবিধা আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, এখানে রোগিকে শুধুমাত্র ওষুধ, টেষ্ট, খাওয়া খরচ দিতে হয়।
করোনা আক্রান্ত হয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে যারা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন তাদেরই একজন হচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই মেডিক্যাল সেন্টারটির সেবার মান খুবই ভাল। এখানে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ও নার্স থাকেন। এমন একটি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করার জন্য তিনি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়ন সচিব ও পাউবো মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ধারণা করা হয়েছিল শীতকালে এ ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত অবস্থাই দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরের দিকে উঠলেও ডিসেম্বর মাস থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নীচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর কারণে এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নদী বন্দর / এমকে