1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
৫৫ বছর ধরে নৌকা তৈরি করছেন আইনুল - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১
  • ১১৫ বার পঠিত

নদীমাতৃক আমাদের এ দেশ। আর নদীপথে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম নৌকা। বর্ষার মৌসুমে নদীর পানি প্লাবিত হয়ে চলে আসে লোকালয়ে। ভরা বর্ষার সময়ে নৌকা ছাড়া নিন্মাঞ্চলগুলোতে চলাচলের উপায় নেই। এ ছাড়াও বন্যার সময় বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর একমাত্র ভরসা নৌকা।

তাই কারিগররা বর্ষার আগে থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নৌকা বানাতে বা মেরামতের কাজে। অনেকেই মৌসুম অনুযায়ী নৌকার কারিগর হলেও আইনুল হকের বছর ব্যস্ততায় কাটে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে নৌকা বানাতে।

jagonews24

আইনুল হকের জন্ম জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বালক গ্রামে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আইনুল হক সবার ছোট। বাবা মৃত মফিজ হক ছিলেন সংসারী। জমি-জমা আবাদ করে সংসার চালাতেন তিনি। বাবার অভাবের তাড়নায় একদমই পড়ালেখা করতে পারেনি আইনুল।

আইনুলের চার মেয়ে ও দুই ছেলে। চার মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে দু’জন সংসারের কাজ-কর্ম ও আবাদ করেন। নৌকার মজুরি দিয়েই চলে আইনুলের সংসার।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে শখের বসে নৌকা বানান আইনুল। এ সময় তার নৌকা বানানোর ওস্তাদ ছিলেন ছমিজল মিয়া। তবে এখন তিনি পেশা বেছে নিয়েছে নৌকা বানানোর কারিগর হিসেবে। আইনুল হকের বয়স ৭০ বছর। তিনি প্রায় ৫৫ বছর ধরে নৌকা বানান।

jagonews24

নৌকা বানানোর কারিগর কেনো হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আইনুল বলেন, ‘জীবনে প্রথম নৌকা বানাইছি ছোটবেলায়। ১৪-১৫ বছর বয়স যখন ছিল। তখন শখের বসেই নৌকা বানাইছিলাম। কিন্তু এইটাই এখন আমার রিজিকের ব্যবস্থা। আমার এলাকা নদী গ্রাম হওয়াতে এখানে ছোটবেলা থেকেই আমি নদী ও নৌকার সাথে পরিচিত। যমুনা নদীতে বান (বন্যা) এলেই এলাকাতে নৌকা ছাড়া চলা যায় না।

মানুষজন তখন নৌকা দিয়েই যাতায়াত করে। তখন এখানে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। মানুষজন তাদের ফসল-আবাদ, পণ্য সব নৌকার মাধ্যমেই পরিবহন করেন। তাই আমি ভাবলাম আমি নৌকাই বানাবো, নৌকার কারিগর হয়েই জীবন কাটাবো। এজন্যই আমি নৌকার কারিগর হলাম’।

আইনুল সারাবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে নৌকা বানান। বিশেষ করে বাইচের নৌকা বানানোর জন্য তার আলাদা কদর রয়েছে। সারাদেশ থেকে তার ডাক আসে। ডাক আসলেই চলে যান তিনি নৌকা বানাতে। আইনুল এ পর্যন্ত বাইচের জন্য বড় নৌকা তৈরি করেছেন ৩৫টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় নৌকা ছিলো সাড়ে বাহাত্তর হাত।

jagonews24

এর জন্য আইনুল তার মজুরি হিসেবে নিয়েছিল দেড় লাখ টাকা। তার নাম দিয়েছিলেন তিনি বঙ্গ বাহাদুর। এছাড়াও তিনি নৌকা বানিয়ে সেগুলোর একটা নিজেস্ব নাম দেন। নাম গুলো শুনতে চাইলেই আইনুল নামগুলো বলেন। সোনার বাংলা, তুফান, বাংলার বাঘ, বাংলার বন্ধু, উজানের নায়ক, দশের দোয়া এগুলো ছিলো উল্লেখযোগ্য নাম।

বর্তমানে তিনি বগুড়ার সোনাতলায় বাইচের জন্য নোকা বানাতে এসেছেন। এখানে তিনি ফজল হক মিয়ার ৬৫ হাত নৌকা বানাচ্ছেন প্রায় ৭ দিন হলো আরও সাত-আটদিন লেগে যেতে পারে এই নৌকা বানাতে।

jagonews24

এ নৌকার জন্য তিনি মজুরি চেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। জাহেদুল হক নামের এক ছেলেকে সঙ্গে রাখেন তিনি। তার সহকারী হিসেবে। ক্ষেত্রবিশেষ দুই-তিন জনও রাখেন তার নৌকা বানানোর কাজে সাহায্য করার জন্য।

বাইছের নৌকা বানানোর সাথে সাথে তিনি ছোট, বড়, মাঝারি নৌকাগুলোও বানান ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী। ১৬ থেকে ১৭ হাতের একেকটা নৌকা বানাতে আইনুল মজুরি নেন চার হাজার টাকা করে। আইনুল বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেন নৌকা বানিয়ে।

jagonews24

নদীপাড়ের মানুষ আইনুল। নৌকাই তার একমাত্র সুখ দুঃখ। নৌকা বানায়েই জীবনটা কাটিয়ে দিলো আইনুল। এরই মাঝে আইনুলের হাত ধরে তৈরি হয়েছেন আরও কয়েকজন নৌকার কারিগর। আইনুলের ইচ্ছা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নৌকা বানিয়ে যেতে চান।

নদী বন্দর / পিকে

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com