লটকনকে এক সময়ে জঙ্গলি ফল বলা হতো। বনে-জঙ্গলে জন্ম নেয়া গাছে ধরে থাকতো এ ফল। তেমন একটা কদরও ছিল না। তবে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা হয়ে গেছে। তাই কদর আর চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণে।
এ ফলের সম্ভাবনা দেখে কয়েক বছর আগে একটি বাগান করেছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী কেদারাকোট গ্রামের জালাল উদ্দিন খান। সম্ভাবনাময় এ ফলে নিজে স্বপ্ন দেখেন, অন্যকেও স্বপ্ন দেখান তিনি। তাকে দেখে এখন অনেকেই এমন লটকন বাগান করার স্বপ্ন দেখছেন।
লটকন চাষি জালাল উদ্দিন খান জানান, এ বছর খড়ার কারণে লটকন কিছু কম ধরেছে। কিন্তু সাইজ অনেক বড় হয়েছে। অন্তত ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক জায়গা আছে। যেখানে মানুষ বিভিন্ন কাঠের গাছ রোপণ করে রাখে।
৫ বছর পর হয়তো ১ থেকে ২ লাখ টাকার কাঠ বিক্রি করে। আমার স্বপ্ন হলো, আমাকে দেখে যদি মানুষ কাঠের গাছ বাদ দিয়ে ফলের গাছ রোপণ করে তবে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান জানান, হবিগঞ্জ জেলায় লটকনের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ফল। ভিটামিন বি-টু, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল লটকন।
এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। তিনি বলেন, চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলায় লটকনের ভাল আবাদ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সর্বাত্মক কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছি। তাদেরকে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
লটকন বাগানে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক জানান, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে যথামসয়ে ফল বিক্রি না হওয়ায় তারা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট এলাকায় ২শ’ শতাংশ পতিত জমির উপর অল্প খরচে একটি মিশ্র ফলের বাগান প্রতিষ্ঠা করেন মো. জালাল উদ্দিন খান। যার অর্ধেক লটকন।
আর অর্ধেক অন্যান্য ফল। সারি সারি গাছে লটকন থরে থরে ঝুলে থাকার দৃশ্য যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে। বর্ষায় ভিজে থাকা প্রকৃতিতে এ দৃশ্য যেন আরও বেশি ফুটে ওঠেছে।
চারা লাগানোর ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। প্রতি বছর তিনি এখানে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করেন। দিনে দিনে মানুষ জেনেছে সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফল লটকন সম্পর্কে। বাজারে এর চাহিদাও বেড়েছে কয়েক গুণ।
এতে উৎসাহিত হয়েই তিনি বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতে এ বাগান করেছেন। তার এ উদ্যোগ দেখে এখন এলাকায় অনেকেই এমন বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
নদী বন্দর / বিএফ