জাতীয় ফুল শাপলা। দেখতে যেমন সুন্দর; তেমনই তরকারি হিসেবেও সুস্বাদু। কেউ খান শখ করে, কেউ খান অভাবে পড়ে। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিবরা বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে নানা ধরনের খাবার তৈরি করেন। শহরের লোকজন শখের বশে এ মৌসুমে ২-৪ দিন শাপলা তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন। সেই শাপলা কুড়িয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই আবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জানা যায়, ফরিদপুরের ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কাজ নেই। তাই অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এতে কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
বর্ষায় বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় শাপলা জন্মেছে। তবে আগের মতো বর্ষা হয় না বলে শাপলা তেমন মেলে না। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলের পানিতেও সাদা-লাল রঙের শাপলা ফুটেছে। শাপলা সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন পাওয়া যায় না।
এলাকার শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোর থেকে নৌকা নিয়ে বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করেন। গত কয়েক বছর যাবৎ এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন।
কয়েক বছর ধরে শাপলা বিক্রি করে ভালোই চলছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আকুব্বরের সংসার। ষাটোর্ধ্ব আকুব্বর শেখ খাল-বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে বিক্রি করে চালান ৬ সদস্যের সংসার। করোনার সময় প্রায় ৪ মাস উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করে রোজগার ভালোই হচ্ছে তার।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রাম বাজারে শাপলা বিক্রি করছিলেন তিনি। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। আকুব্বর শেখ জানান, খুব ভোরে বিভিন্ন বিল থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে শাপলা কুড়ান তিনি। পরে অটোভ্যানে করে এগুলো বাজারে এনে বিক্রি করেন। প্রতি আটি শাপলা বিক্রি করেন ৫-১০ টাকা। দিনশেষে ৫০০-৭০০ টাকা হয়। যা দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলে সংসার।
বোয়ালমারী উপজেলার ভোতনের বিল, দাদুড়িয়ার বিল, টোংরাইল, সুতালিয়া, মোড়া, কুমরাইল, তেতুলিয়া, বন্ডপাশা, বাজিদাদপুর, চাপখণ্ড, ভাবখণ্ড, ধোপাডাঙ্গা বিল, সাতৈর ইউনিয়নের বামনডাঙ্গি, কুন্ডু রামদিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বর্ষায় শাপলা পাওয়া যায়। মধুখালী উপজেলার গাবুরদিয়া বিল, আলফাডাঙ্গার কুসুমদি, ঝাটিগ্রাম, গোপালপুর, চর নারানদিয়া, নদীয়ার চাঁদ ঘাট, সালথা, সদরপুর, নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয়ে শাপলার দেখা মেলে।
নিজেদের খাওয়ার জন্য শাপলা সংগ্রহের কথা জানান সাতৈর ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজকর্মী নাসির উদ্দীন ফুরকান। বোয়ালমারী উপজেলার মোড়া গ্রামের বাসিন্দা রিপন টিকাদার, অচিন্ত বালা জানান, বর্ষা মৌসুমে তাদের আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় প্রচুর শাপলা পাওয়া যায়। অনেকেই পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, ‘ফরিদপুরে বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই শতাধিক খাল, বিল, নদী-নালা, জলাশয়ে শাপলা পাওয়া যায়। তবে আগের মতো বর্ষা না হওয়ায় এর উৎপাদনে হ্রাস পেয়েছে। এটি সবজি হিসেবে খুব ভালো।’
নদী বন্দর / সিএফ