কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বাঁওড়ের মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রান্তিক জেলেদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ইফাদ প্রকল্পের অধীনে উপজেলার প্রায় ২৬ হেক্টর আয়তনের কালীগঙ্গা-বাদলবাসা বাঁওড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমিতির মাধ্যমে স্থানীয় ৬০ জন জেলে মাছ চাষ করে আসছেন। এই বাঁওড়ে মাছ ছাড়া এবং বিক্রি উভয়ই সরাসরি মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। তবে মাছের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয় সমিতির মাধ্যমে জেলেরাই দেখাশোনা করে থাকেন।
কালীগঙ্গা-বাদলবাসা বাঁওড় মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন জানান, প্রতি বছর পাট মৌসুম শুরু হলে স্থানীয়সহ আশপাশের চাষিরা এই বাঁওড়ের পানিতে পাট জাগ দিয়ে থাকেন। তবে স্থানীয় চাষিরা পাট জাগ দেয়ার আগেই উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা এবং উপস্থিতিতে জেলেরা মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে দেন।
আকমল হোসেন আরও জানান, এবছর বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না দেয়ায় তারা পাট জাগ দেয়ার আগে মাছ ধরে নিতে ব্যর্থ হন। বাঁওড়ে লাখ লাখ টাকার মাছ থাকা অবস্থায় স্থানীয়সহ আশপাশের চাষিরা এই জলাশয়ের পানিতে পাট জাগ দেয়ায় অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দেয়। অক্সিজেনের অভাবে ২৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তিন দিন বড় বড় রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিনার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে উঠতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী কুমারখালী উপজেলার লাহিনী গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে বাঁওড়ে সব মাছ পানির ওপরে ভাসতে দেখে দুধারের বাসিন্দারা যে যেভাবে পেরেছেন মাছ ধরে নিয়ে যান।’
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই বাঁওড়ের পানিতে (কুষ্টা) পাট পচানোর ফলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে পানির সব মাছ ভেসে ওঠে। তখন আশপাশের লোকজন এসব ভেসে ওঠা মাছ বিভিন্নভাবে ধরে নিয়ে যায়।
কালীগঙ্গা-বাদলবাসা বাঁওড় মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন অভিযোগ করেন, বাঁওড়টি সরাসরি মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে। এখানকার প্রান্তিক জেলেরা মাছ চাষ করলেও সঠিক সময়ে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করায় এবং তাদের অবহেলার কারণেই শত শত লোক পানিতে নেমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে গেছে। বার বার ফোন করে সাহায্য চাইলেও উপজেলা মৎস্য অফিস তাদের কোনো সাহায্য করেনি।
কুমারখালী উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বাঁওড়ের পানিতে পাট পচানোর কারণে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ায় বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ সময় মাছের জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দেয়। এতে মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠে। সময় মতো এর চিকিৎসা দিতে না পারলে পানির সব মাছই মরে যেতে পারে। বাদলবাসা বাঁওড়ের জেলেরা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ডিএফওকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত মাছ নিয়ে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) সাজেদুর রহমান মাছ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অবগত নন দাবি করে জানান, এটাতো কুমারখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্ব। উনিই বাদলবাসা বাঁওড়টি দেখভাল করে থাকেন।
নদী বন্দর / পিকে