হাওর মানেই দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি, নির্মল বাতাস, সাগরের মতো উত্তাল ঢেউ। সেই পানিতে হেলে পড়া নীল আকাশে সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। কোথাও একখণ্ড সুবজ দ্বীপ, ডিঙি নৌকায় জেলেদের দাঁড়টানা।
বর্ষায় অপরূপ রূপে সাজে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। গ্রীষ্মের শুষ্ক আবাদভূমি বর্ষায় যেন রূপ নেয় সাগরে। সেই রূপ অবগাহনে ছোটেন অসংখ্য ভ্রমণপিয়াসী।
গত কয়েক বছর নিকলিসহ কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। অলওয়েদার সড়ক দিক হারায় নীল জলরাশির অন্দরে। কিন্তু হাওরে রাতযাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় পর্যটন কিছুতেই যেন পরিপূর্ণতা পাচ্ছিল না। সে অভাব পূরণ করতেই কিশোরগঞ্জের হাওরে বিস্তৃত জলরাশির বুকে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিকমানের আবাসন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট।
এরই মধ্যে হাওরের বিস্ময় হিসেবে খ্যাতি কুড়ানো অলওয়েদার সড়কের অদূরে মিঠামইন উপজেলার হোসেনপুরে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট। এখানকার নৈসর্গিক পরিবেশ মন কাড়বে যে কারও।
পানিপথে অলওয়েদার সড়কের মিঠামইন উপজেলার জিরো পয়েন্টে দাঁড়ালেই দূরে চোখে পড়বে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা দু-একটি গ্রাম। এরই ফাঁক গলে দেখা যাবে বর্ণিল ছোট ছোট স্থাপনা। সেটাই প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড।
প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এ রিসোর্টটি চারদিকে পানিবেষ্টিত। ভেতরে বিশালায়তনের পুকুর। পুকুরের চারপাড় কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। রিসোর্টে প্রবেশের পরই চোখে পড়বে চারপাশে সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালি। পাখিদের কলরব। বকের ওড়াউড়ি।
রিসোর্টে আছে তিনতারকা মানের ডাবল ইউনিটের ১০টি কটেজ। হাওরের মধ্যে গড়ে তোলা এসব কটেজে বারান্দা কিংবা শয়নকক্ষ থেকে উপভোগ করা যাবে হাওরের সৌন্দর্য। ঘর থেকেই বাতাস আর ঢেউয়ের গর্জন আকৃষ্ট করবে যে কাউকে।
রিসোর্টে থাকছে একসঙ্গে ৪০০ মানুষের ধারণক্ষমতার আধুনিক আউটডোর পার্টি সেন্টার, ইনডোর রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে হাওরের তরতাজা মাছসহ দেশি ও চাইনিজ-থাই ফুড।
পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ওপেন কালচারাল সেন্টার, শিশুপার্ক, সুইমিংপুল, ওয়াটার বাইক ও প্যাডেল বোট।
রিসোর্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নৌকা কিংবা স্পিডবোটে ঘোরা যাবে হাওরের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়। এর বিশাল পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন পর্যটকরা। পুকুরের চারপাশে পাকা সড়কের স্থানে স্থানে রয়েছে বসে আড্ডা দেওয়া, কপি পান কিংবা নীল আকাশ নিয়ে ছবি তোলার সুযোগ।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর কিশোরগঞ্জের হাওর বর্ষায় নতুন রূপে ধরা দেয় আগন্তুকদের কাছে। আবার শুষ্ক মৌসুমে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। হাওরের মাঝখানে গড়ে ওঠা এ নান্দনিক রিসোর্টটি সব মৌসুমে পর্যটক টানবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতির মো. আব্দুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
অলওয়েদার সড়কে ঘিরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। কিন্তু তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য নেই মানসম্পন্ন রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল। এ চিন্তা থেকেই উন্নতমানের এ রিপোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপরা পরিচালক (এমডি)।
প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের এমডি ডা. এ বি এম শাহরিয়ার বলেন, হাওরে আসা পর্যটকদের সেবার মানসিকতা নিয়েই এ রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টের নির্মাণকাজ শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চলমান লকডাউন পরিস্থিতি শেষ হলেই এটি উদ্বোধন করা হবে।
মিঠামইন উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এ রিসোর্টের অবস্থান। এখান থেকে বর্ষায় পানিপথে ও শুষ্ক মৌসুমে পাকা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যাবে রিসোর্টে।
যাতায়াত
দেশের যে কোনো জায়গা থেকে ট্রেনে কিংবা বাসে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি, অটোরিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিকলি উপজেলা সদর কিংবা করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা যেতে হবে। সেখান থেকে বর্ষায় সরাসরি নৌকা কিংবা স্পিডবোটে যাওয়া যাবে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে।
খরচ
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এখনও ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি। রিসোর্টের ওয়েবসাইটে ডুপ্লেক্স কটেজগুলোর প্রতিটির ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছ প্রতি রাতে প্রকারভেদে ৪০ হাজার টাকা, ২০ হাজার, ১২ হাজার ও ৮ হাজার টাকা।