দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ঘরবন্দি দিন চলতে থাকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক হাফিজুর রহমান মাসুদের। ঘরবন্দি হয়ে একসময় হাঁফিয়ে ওঠেন তিনি। এ সময় তার কিছু একটা করার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
একদিন দুটি দার্জিলিং জাতের কমলা লেবুর চারা কিনে বাড়ির ছোট্ট ছাদে রাখা টবে রোপণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি টান ছিল এই শিক্ষকের। সেই টান থেকে শখ চেপে বসে বাগান করার। শুরু করেন বাড়ির ছাদে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা রোপণ।
এরই মধ্যে মরু অঞ্চলের সুস্বাদু ত্বীন ফলসহ বেশ কয়েক ধরনের গাছে ফল ধরা শুরু করে। এতে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এক সময় শখের বাগান ছাদ পেরিয়ে বাড়ির আশপাশের জমিতে বাণিজ্যিক নার্সারিতে রূপ নেয়। যেখান থেকে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। সাথে আরও দুজন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে তার নার্সারিতে। করোনাকালে অবসর সময় কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাড়তি আয় সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন মনোহরপুর পুখুরিয়া দাখিল মাদরাসার আইসিটির এই শিক্ষক।
জানা গেছে, বাগান করার পর তিনি ধীরে ধীরে সংগ্রহ করেন আরও দেশি-বিদেশি ফলের চারা। অনলাইনে যাচাই করে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে নানা জাতের ফল ও ফুলের চারার সংগৃহশালা তৈরি করেন। তার নার্সারিতে ১৭০ প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা আছে। এগুলোর মধ্যে পার্সিমন, লং মালবেরি ও ইনসুলিন প্লান্ট।
এছাড়া রয়েছে কিউজাই, কিং অপ চাকাপাতা, ব্রুনাই কিংসহ বিভিন্ন জাতের আম। হাজারি কাঁঠাল, থাই বারোমাসি কাঁঠাল, ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল, ভিয়েতনামের গোলাপি কাঁঠাল। কমলার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কমলা, নাগপুরি কমলা, ছাতকি কমলা, মেন্ডারিন কমলা ও কেনু কমলা। এছাড়া চায়না-৩ কাগুজি লেবু, এলাচি কাগুজি লেবু, সিডলেচ কাগুজি লেবু, থাই কাগুজি লেবু।
ভিয়েতনামি ও কেরালা নারিকেল। বিদেশি ফল ত্বীন, জয়তুন, রামবুটান, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডোসহ ঔষধি গাছ করসল, টুরুপ চান্ডাল ও সাদা লজ্জাপতি।
প্রতিদিন তার ছাদ বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে শৌখিন মানুষ আসছেন। ফেরার সময় অনেকে পছন্দের ফুল ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, গত বছর মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সময় কাটাতে ছাদে প্রথমে দুটি লেবুর চারা লাগান। এসময় ঘরবন্দি হয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করি।
শুরু করি আমার ছোট্ট ছাদে দুষ্প্রাপ্ত ফুল ও ফলের ছাদ বাগান। কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই শখের ছাদা বাগান এখন আমার আয়ের আরেকটি উৎসে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে ত্বীন ফলের ৫ লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রি করেছেন তিনি।
মাসুদ আরও জানান, তিনি পরিচিতজন ও এলাকার চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন বিদেশি ফল চাষে। তার প্রেরণায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ শুরু করেছেন। তার ছাদ বাগান ও বাড়ির আঙ্গিনার নার্সারি দেখে এখন অনেকে তাদের নিজ বাড়ির পতিত জমিতে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করছেন বলেও তিনি জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার ছাদ বাগান প্রসঙ্গে বলেন, আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে পারি। ছাদ বাগান আমাদের একদিকে অবসর সময় কাটাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে পরিবারের সবজি ও ফলের চাহিদা পূরণ হবে।
নদী বন্দর / জিকে