নরসিংদীর রায়পুরায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে টিকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেয়ার পর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৯ আগস্ট) ভোরে তার মৃত্যু হয়। রায়পুরা থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে টিকা দেয়ার কথা বলে গৃহবধূ পারভিন বেগমকে (৩০) বাড়ি থেকে ডেকে আনে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে রাতে রায়পুরা উপজেলার উত্তরবাখর নগর ইউনিয়নের লোচনপুর এলাকায় একটি বাশঁঝারে নিয়ে শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে পারভিন বেগমের মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। পারভিন বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে প্রায় সময়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ও তার মেয়েকে কারণে-অকারণে নির্যাতন করতো। বছরখানেক আগে পারভিন বেগমের দেবর আলী হোসেন পারভিনের মেয়ের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেন। নাতনীর পায়ে কোপ দেয়ার ঘটনায় পারভিনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন।
এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে পারভিনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি সোবানপুরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হন। এরই মধ্যে শনিবার টিকা দেয়ার নাম করে পারভিনকে বাবার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিকেলে পারভিন দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা (দেবরের স্ত্রী) রহিমা বেগমের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থেকে সিএনজি যোগে টিকা দেয়ার জন্য বের হন। সিনজিতে ওঠার কিছুক্ষণ পর তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলেন তারা।
সিএনজিতে সময় ক্ষেপণের পর রাতে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে সিএনজি থেকে নামিয়ে তাকে শ্লীলতাহানি করেন দেবর। পরে আবার সিএনজিতে তুলে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। পরে রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে নিয়ে যান। সেখানে এক পর্যায়ে তার দেবর ‘তরল জাতীয় কিছু’ শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকায়শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে এ ঘটনায় দগ্ধ পারভিনের ভাই আকরাম হোসেন বাদী হয়ে তার দেবরসহ ৪ জনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযুক্ত দেবর আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করেছে।
রায়পুরা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন,‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পূর্বের মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। ইতোমধ্যেই গ্রেফতার দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ আদলতে রিমান্ড শুনানি হবে।’
নদী বন্দর / পিকে