1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
মরুভূমির ত্বীন ফল এখন ঠাকুরগাঁওয়ে - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১
  • ১২৮ বার পঠিত

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথমবারের মতো ব্যক্তি উদ্যোগে চাষ শুরু হয়েছে ত্বীন ফলের। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ ফলটি ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং স্বাদে মিষ্টি। এ ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধ ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকারও পাওয়া যায় এ ফল থেকে।

ইএসডিও নামে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আক্তার নামে এক নারী উদ্যোক্তা সদর উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকায় চলতি বছর এক একর জমিতে মরুভূমির ত্বীন ফল চাষ করে সফল হয়েছেন।

পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাগানে কর্মরত শ্রমিক আলমগীর হোসেন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ডুমুর আকৃতির ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের।

বাগান দেখতে আসা শহরের হাজিপাড়া মহল্লার রুবেল রানা ওশাহিন আলম নামে দুই ব্যবসায়ী বলেন, আরব দেশের মরুভূমির ফল এখন নিজ এলাকায় চাষাবাদ হচ্ছে। তাই ফলটি দেখার আগ্রহ নিয়ে ছুটে এসেছি। এই ফলটির কথা পবিত্র কোরআনের আছে সুরা ত্বীন-এ। এই মূল্যবান ফলটি বাগানে এসে দেখতে পেয়ে আমাদের অনেক ভালো লাগল।

গোবিন্দনগর এলাকার স্কুল শিক্ষক এন্তাজ উদ্দিন বলেন, এলাকায় এই প্রথম চাষ হওয়া এই ফল তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকের আগ্রহ বাড়িয়েছেন। তিনি নিজেও এই ফল চাষাবাদের কথা ভাবছেন। একই এলাকার সাদেকুল ও শফিকুল নামে দুই যুবকও জানালেন এমন আগ্রহের কথা।

তারা বলেন, ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ফলের বাগান করার ইচ্ছা তাদেরও। বাগান দেখার পাশাপাশি বাগানে কর্মরত আলমগীর কাছ থেকে এই ফল চাষের নিয়ম ও পদ্ধতিও শিখে নিচ্ছেন।

ইএসডিও প্রকল্প সমন্বয়ক আইনুল হক বলেন, গত বছরের শেষের দিকে ভারত থেকে মিশরীয় জাতের ত্বীন ফলটির গাছ নিয়ে আসা হয়েছে। ওই বছর এক একর জমিতে এ গাছগুলো রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপণের কয়েকমাসের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে এখন ৭০-৮০টি করে ফল ধরেছে। তবে গাছটির বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ফলও অনেক বেশি ধরবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সম্বয়ক আরও বলেন, ত্বীন শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হলেও আমরা এই জেলাতে প্রথম প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও এ ফল উৎপাদন সম্ভব। ত্বীন ফলটির প্রসার বৃদ্ধিতে ইএসডিও কৃষি ইউনিটের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করে এ গাছের কলম তৈরির মাধ্যমে যেনো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।

jagonews24

বাগানের কর্মরত শ্রমিক শফিকুল জানান, ত্বীন গাছটিতে কোনো রকম রাসায়নিক সার দেয়া হয়নি। জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে গোড়ায় দিয়েছি। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কাও পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলো বড় হয়ে উঠেছে। এ সময়ে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি। রোপণ করা গাছগুলোর মাটি বেলে ও দো-আঁশ মাটির সংমিশ্রণ হলেও এই আবহাওয়ার সঙ্গে এখন মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন।

ইএসডিও পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আক্তার জানান, শখের বসে এই পবিত্র ফলের চারা রোপণ করা হয়েছিল। প্রথম বছরে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে। তবে ত্বীন গাছটির বীজ থেকে চারা উৎপাদনের হার কম হওয়ায় নির্ভরতা করতে হচ্ছে কাটিং বা কলম চারায়।

যার কারণ হচ্ছে বীজের চারায় ফলন আসে কয়েক বছর পর। অন্যদিকে কলম চারায় ফল আসে মাত্র ৬ মাসে। এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্ভবনাময় এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা গেলে দেশে বেকারত্ব হার কমে আসবে। একই সঙ্গে রপ্তানির মাধ্যমে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষি বিদ মো. আবু হোসেন বলেন, বেসরকারিভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে এই প্রথমবার ত্বীন চাষ করা হচ্ছে। ত্বীন বা ডুমুর ফলের বাগানটিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপ-সহকারীরা নিয়মিত পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

কোনো রকম রাসায়নিক কীটনাশক ও সার ছাড়াই এ ফলটি চাষ করা সম্ভব। ডুমুর ফলটি সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এর পাতা গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে দুধ দেয়া গাভি থেকে অনেক বেশি দুধ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও এর পাতা পুকুরে গুঁড়ো করে ছিটিয়ে দিলে পানি বিশুদ্ধ থাকে।

তবে দেশের বাজারে এই গাছগুলোর অনেক বেশি দাম হওয়ায় কৃষকদের অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। তাই সরকারিভাবে এই গাছের চারা বিনা মূল্যে কৃষকদের মাঝে দেয়ার বিষয়ে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো। বাণিজ্যিকভাবে সম্ভবনাময় এই ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে এক সময় বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবিভাগের এই কর্মকর্তা।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপতালের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক জিপি সাহা বলেন, ডুমুর বা ত্বীন জাতীয় এ ফলটিতে রয়েছে ৭০ প্রকারের ভেজষ গুণ। তবে মূলত এই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এক মহৌষধ ।

ডুমুরের ফল সবজি হিসেবে খেতে আমরা রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীরে মেদ কমানো, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেস্ট ক্যান্সার, শরীরে হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখা, মানসিক ক্লান্তি দূর করাসহ অনেক রোগ নিরাময়ে এই ফলটি সহায়তা করে।

 

নদী বন্দর / সিএফ

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com