সরকার টিকা নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, করোনা মোকাবিলায় সব দিক দিয়ে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। না পেরেছে তারা চিকিৎসা দিতে, না পেরেছে তারা আমাদের জনগণকে আগাম একটা প্রিভেনটিভ ব্যবস্থা করতে, না পেরেছে তারা মানুষের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে যে, আমি এখানে চিকিৎসা পাবো। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে শুধু দুর্নীতির কারণে।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড। এত মিথ্যা কথা, এত মিথ্যা অপপ্রচার যে মিথ্যা অপপ্রচার ও ভুল তথ্য দিয়ে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যারা বিশেষজ্ঞ আছে তারা বলছেন যে বয়সে মানুষের টিকা দেয়া দরকার আমি ধরে নেই সেটা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত টিকা দেয়া দরকার। তাহলে আপনার টিকার প্রয়োজনীয়তাটা হয় মোটামুটিভাবে ১৩ কোটি। ১৮ কোটির দেশে ১৩ কোটি টিকা দরকার হয়। তাহলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। আনে ২ লাখ, ৩ লাখ, ১ লাখ। তাও আবার দান, অনুদান আসে। সেখানে বলে যে, আমরা গণটিকা দেয়ার অভিযান করছি এবং প্রতিদিন এক কোটি করে টিকা দেবো। অথচ টিকা নাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে মিথ্যা তথ্য প্রচারণা। এদের লজ্জা-শরমও নেই। তারা ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমি একদিন বলেছি যে, এটা একটা ফ্রড গভমেন্ট।
করোনার শুরুর পর প্রথম দিকে চীন ও রাশিয়ার টিকা দেয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, চীন ও রাশিয়া প্রথম দিকে এখানে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। তখন তারা (সরকার) নেয়নি। কেন নেয়নি? তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতম ইতিহাসের সর্বোচ্চ সম্পর্ক যাদের সঙ্গে আরকি, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল যে চুক্তিটাও সম্পূর্ণ জনবিরোধী চুক্তি। সেই টিকার দাম বেশি, আবার টিকার অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সম্ভবত এক কোটি ২০ লাখ টিকা এসছিল আর কোনো টিকা আসেনি। এখন চীনের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, এখানে টিকা বোতলজাত করবে। আমি জানি না এই চুক্তির ভেতরে ডিটেইলস কী আছে, কখন শুরু করবে।
ফখরুল বলেন, আমার কথা হলো- চীনের টিকাই যদি নিতে হয়, ওইটাই যদি উৎপাদন করতে হয় তাহলে প্রথমে করলেন না কেন? একটা বিশেষ প্রাণী যখন পানি খায় ঘোলা করে। এরা হচ্ছে সেই প্রাণীয় যারা ঘোলা করে খায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবর্হিভূত’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোটা দেশের মানুষ যখন করোনার টিকা ও জীবন-মৃত্যু নিয়ে লড়ছে সেই সময়ে তারা এটাকে ডাইভার্ট করে দিতে চান বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। আমি মনে করি উনার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত। কোনো দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে এই বিষয় নিয়ে এত কথা বলার আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে ওরা শহীদ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেই চলেছে। বন্ধ হচ্ছে না, চলছেই। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকেরাই জড়িত, জিয়াউর রহমানের প্রশ্নই উঠতে পারে না। এভাবে জাতিকে ধোঁকা দিয়ে, মিথ্যা কথা বলে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার ভয়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই তারা (ক্ষমতাসীনরা) এসর মিথ্যাচার করছে। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে যতকিছু বলো না কেন তাকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির পরিচালিত কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের জন্য ওষুধ সামগ্রী হস্তান্তর উপলক্ষে জিয়া পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক এমতাজ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে জিয়া পরিষদের নেতাদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আবু জাফর খান, দেলোয়ার হোসেন, শহীদুল ইসলাম, নীলিমা রহমান লিলি, নুরুন নবী, ইদ্রিস আলী প্রমুখ নেতারা ছিলেন।
নদী বন্দর / বিএফ