নবজাতককে পৃথিবীর পরিবেশের সাথে সংযুক্ত হতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অসুখ বা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেই সমস্যাগুলোর মধ্যে অ্যাসিডিটি খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। ছোট-বড় সবাই এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাবারের জন্য অনেকেরই অ্যাসিডিটি হয়।
নবজাতকের অ্যাসিডিটি হলে তারা কান্নাকাটি করে প্রচুর। পেট হালকা ফুলতে পারে। প্রতিটি নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর পরে পিঠে হালকা থাবা দিতে হবে। এতে খাবার হজম হবে সঠিকভাবে। পিঠে থাবা দিলে মুখ দিয়ে ঢুকে যাওয়া বাতাসগুলো বের হয়ে যাবে। তখন সহজে অ্যাসিডিটি বা বমি হবে না।
নবজাতকের পেটে দীর্ঘদিন থেকে গ্যাস জমতে জমতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিডিটি হয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। তাই নবজাতককে দুধ খাওয়ানের সাথে সাথেই ঘুমাতে না দিয়ে, কিছুক্ষণ ঘাড়ের কাছে রেখে, পিঠে থাবা দিতে হবে। এতে নবজাতকের মুখ দিয়ে ঢেকুড়ের শব্দও হতে পারে।
শিশুর মধ্যে যারা খাবার খেতে অভ্যস্ত; তাদের ছোট থেকেই পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। ছোটরা বড়দের মতো পানি খেতে চায় না। আর ঠিক সময়ে খাবারও খায় না। এ জন্য তাদের খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। প্রায় শিশু পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে অনীহা সমস্যাগুলোয় ভোগে। তারা সমস্যার কথা বলতে পারে না। কান্নাকাটি করে বা বিরক্তিতে ভোগে। বাসার মানুষকেও তখন বিরক্ত করে।
শিশুরা দুধ খায়। তাই তাদেরও গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। দুধ ভীষণ পুষ্টিকর খাবার। এতে সব রকমের পুষ্টি রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তাই দুধ হজম করতে সবারই বেগ পেতে হয়। আর দুধ ছাড়া শিশুদের পুষ্টি হবে না। নবজাতক ও শিশুর দুধ খেতেই হবে। যেসব শিশু ফিডার খায়, তাদের ফিডার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ও ফুটাতে হবে। তাহলে রোগ-জীবাণু মরবে। জন্মের পরপর শিশুর ‘রোটা’ নামের একটি ভাইরাসের আক্রমণে ডায়রিয়া হয়।
তাই যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। কারণ ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ পানি বের হয়ে যায়। তখন শিশুরা হয়ে যায় আরও দুর্বল। তাই ডায়রিয়া যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশু একটু বড় হলে বাইরের নানা রকম খাবার খেতে চায়। প্রায় শিশুর পছন্দের খাবার হলো বাসার বাইরের খাবার। যেমন- চিপস, চকলেট, বার্গার, চুইনগাম। খাবারগুলোয় মাখন, মেয়োনিজ, তেল, মশলা বেশি থাকায় শিশুর হজম হতে সমস্যা হয়।
তখন শিশুর বুকে জ্বালা-পোড়া, বদহজম, শরীর খারাপ লাগা, জ্বর জ্বর লাগা- এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। বদহজমের জন্য শিশুর ফুড পয়জনিংও হয় অনেক সময়। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এতে দেহের দূষিত তরল পদার্থগুলো ঘাম ও মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে শিশুর অন্য অসুখ হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
কিডনির কাজ করার ক্ষমতাও বাড়বে। শিশু-কিশোরদের বাসার বাইরের খাবার যতটা কম খাওয়ানো যায়, ততই ভালো। কারণ বাসার বাইরের খাবারে রোগ-জীবাণু ও দূষিত পদার্থ থাকতে পারে। তাই যতটা সম্ভব বাসার খাবার খাওয়াতে হবে। এতে রোগ-জীবাণুর পরিমাণ কমবে আর শিশুর অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের পরিমাণও কমবে।
শিশুর অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের পরিমাণ কমানোর জন্য তাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, পোশাক, খেলনা, বই-খাতা, বিছানা সব কিছুই হওয়া চাই যতটা সম্ভব রোগ-জীবাণুমুক্ত। নবজাতকের মাকে চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত দেড় বা দুই লিটার পানি খাওয়ার জন্য।
যেসব শিশু পানি খুব কম পান করে, তাদের পানি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে তাদের খাবার হজমে সুবিধা হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকলে, সেটাও কমবে।
করোনাভাইরাসের জন্য শিশুর স্কুল বন্ধ। তার হাঁটা-চলার পরিমাণ সীমিত হয়ে গেছে। বিশেষত জনবহুল রাজধানী ঢাকায় শিশুর খেলার মাঠের খুব অভাব। তাদের খাবার যেন সহজে হজম হয়, সেদিকে পরিবারের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
নদী বন্দর / পিকে