কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ৯৮ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত ৯৮.৪৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মেঘনা উপজেলা। সামগ্রিকভাবে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ নাজুক। তাই প্রতি বছর সরকারিভাবে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সেতুগুলো সড়কের বদলে নির্মাণ করা হয়েছে বিলের মাঝে।
সেতু নির্মাণের পর এর পাশে যেমন মাটি ভরাট করা হয়নি তেমনি কোনো সড়কের সঙ্গে সেগুলোর সংযোগও দেয়া হয়নি। ফলে এগুলো স্থানীয় জনগণের কোনো কাজেই আসছে না।
বিলের মধ্যে এসব সেতু নির্মাণের প্রায় ৪ বছর পার হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় তুমুল সমালোচনা চলছে স্থানীয়দের মাঝে।
মেঘনা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মানিকারচর ইউনিয়নের বারহাজারী স্কুল সংলগ্ন এলাকায় ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু এবং ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামে একই দৈর্ঘ্যের সেতু দুটি নির্মাণ করে মেসার্স সোহাগ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা করে সেতু দুটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৩০৬ টাকা।
এছাড়া একই উপজেলার লুটেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ঝিনঝিনি খালে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ৩০ লাখ ৯০ হাজার ২০ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরজাহান এন্টারপ্রাইজ। একই ইউনিয়নের লুটেরচর গহর মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয়ে আরও একটি সেতু নির্মাণ করে মেসার্স আদিবা বিল্ডার্স নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
ওই ৪টি সেতু নির্মাণে সরকারের মোট ব্যয় হয় ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৯ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি ভরাটের কথা থাকলেও মাটি ভরাট না করায় সেতুগুলো জনগণের কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া এসব সেতু দিয়ে চলাচল করতে বিলের ভেতর দিয়ে মূল রাস্তার সঙ্গে নতুন রাস্তা তৈরি করা ছাড়া এসব সেতু নির্মাণের কোনো প্রয়োজন ছিল না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বারহাজারী স্কুল সংলগ্ন সেতুটি মূল সড়ক থেকে ৩০ থেকে ৪০ মিটার দূরে। চেঙ্গাকান্দি গ্রামেও সেতুটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে। অন্য দুটি সেতুও মূল সড়ক থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে।
এ বিষয়ে মানিকারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘খালের ওপর নির্মিত সেতু দুটি কৃষি মৌসুমে ফসল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার হয়। তাছাড়া এলাকাবাসীর অন্য কোনো কাজে আসে না।’
লুটেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা উল্ল্যাহ সিকদার বলেন, তৎকালীন সময়ে স্থানীয় কৃষকরা বিল থেকে ধান কেটে ঝিনঝিনি খালের ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে বাড়ি ফিরতেন। পরে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সময়ে শেখেরগাঁও থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে দিলে এলাকার শত শত সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
তবে তখন এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে কৃষি কাজের সামগ্রী আনা-নেওয়ার উদ্দেশ্যে, সড়ক নির্মাণের জন্য নয় বলেও তিনি জানান।
একটি সূত্র জানায়, ওই সময়ে মেঘনা উপজেলায় কর্মরত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আইমিন সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি ভরাটের কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারদের বিল পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ বিষয়ে তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলায় কর্মরত) আইমিন সুলতানা শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বলেন, ‘এ দায়িত্ব আমার একার নয়। ব্রিজ নির্মাণ বিষয়ে একটি বাস্তবায়ন কমিটি ছিল। ঠিকাদাররা কাজে অনিয়ম করলে বিষয়টি তারা দেখবেন। এছাড়াও পরবর্তীতে তাদের জামানত ফেরত কে দিয়েছে? আমি তো দেইনি। স্থানীয় এমপি কিংবা মেঘনা উপজেলার বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
যোগাযোগ করা হলে মেঘনা উপজেলার বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিল পরিশোধ আমার যোগদানের আগে সম্পন্ন হয়েছে। এসব সেতু ব্যবহার উপযোগী করতে অনেক টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। তারপরও জনগণের চলাচলের ব্যবস্থা করতে উপযোগী করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’
নদী বন্দর / বিএফ