খুলনার শস্যভাণ্ডার খ্যাত সর্ববৃহৎ উপজেলা ডুমুরিয়ায় এ বছর তরমুজ ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বিশেষত অফ-সিজনে তরমুজের বাম্পার ফলনে বড় লাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কৃষকের সামনে। এতে করে চলতি মৌসুমে সবজিতে হওয়া লোকসান তরমুজে পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ দেখছেন কৃষকেরা।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষিপ্রধান খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি সবজির চাষের পাশাপাশি রসালো ফল তরমুজের আবাদ করেছেন। সঠিক সময়ে নিয়মিত পরিচর্যা করে সবজির পাশাপাশি তরমুজেরও বাম্পার ফলন পেয়েছেন তারা।
বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে মাচানের উপর চাষাবাদ হচ্ছে এসব সবজি ও তরমুজ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যই পাওয়া গেছে। তবে সবজির বাজার দর সন্তোষজনক না হলেও উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় লাভের আশা দেখছেন কৃষক।
সবজিতে তুলনামূলকভাবে লাভ কম হলেও অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভালো থাকায় অধিক লাভের অপেক্ষায় কৃষকেরা। উপজেলার তরমুজ চাষিরা এবার হলুদ ও সবুজসহ একাধিক উন্নতজাতের তরমুজের আবাদ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার ধামালিয়া, রঘুনাথপুর, শাহাপুর, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, শোভনা, সাহস, শরাফপুর, ভাণ্ডারপাড়া, গুটুদিয়া, মাগুরখালী ও ডুমুরিয়া সদরসহ ১৪টি ইউনিয়নের সব এলাকার আবাদযোগ্য জমিসহ মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে চাষাবাদ হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উন্নতজাতের সবজিসহ তরমুজের।
ওইসব এলাকায় আবাদ হওয়া সবজির মধ্যে শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, বরবটি, কাঁচামরিচ, পেঁপে, কুমড়ার জালি, ঝিঙে, পোল্লা, করলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের দিক নির্দেশনায় সবজি চাষে সঠিক পরিচর্যা করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। ফলে উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জিত হওয়ায় অধিক লাভের আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
জেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা চলতি বাজার দরে সবজি বিক্রি করছেন। তরমুজ প্রতিকেজি ৩০ টাকা, শসা ১৮ টাকা, করলা ১৫ টাকা, বরবটি ৩২ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, ঢেঁড়স ২০ টাকা, ঝিঙে ১৫ টাকা, লাউ পিচ ১৫ টাকা, বেগুন ৪২ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক কাজল মল্লিক, ভবতোষ সরকার, নিখিল রায়, প্রণব রায়, শুভংকর মন্ডল, কুমারেশ মন্ডল, গোপাল সরকার, মিলন সানাসহ অনেকে জানান, তরমুজ ও সবজির এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে অধিক লাভের অপেক্ষায় তারা।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়ায় এবার ২৬০ হেক্টর জমির ঘেরের পাড়ে অফ-সিজন তরমুজ চাষ হয়েছে। থাইল্যান্ড ও জার্মানি থেকে আমদানি করা উচ্চফলনশীল জাতের তরমুজ চাষ করে হেক্টর প্রতি ৫৫-৬০ টন পর্যন্ত ফলন হয়েছে। সাধারণত মৌসুমে তরমুজ চাষ করে বাজারে যে দাম পাওয়া যায় অফ-সিজনে তার তিন/চার গুণ দাম পাওয়া যায়। এক হেক্টর জমিতে তরমুজ ফলাতে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, আর তা বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায়। ফলে অফ-সিজন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। আবাদ বাড়াতে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানা ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।
নদী বন্দর / সিএফ