নিরাপদ খাবার পানির জন্য প্রায় ৫০০ ফুট নিচে বসানো হয়েছিল সাব-মার্সিবল পানির লাইন। কিন্তু এটি চালু করলেই উঠছে গরম পানি। পানি এতটাই গরম যে পাঁচ মিনিট পাম্পের লাইনটি চালু রাখলেই ফেঁটে যায় প্লাস্টিকের পাইপ। সেই পানি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরে সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামে।
জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম বাবুর বাড়িতে ৫৪৫ ফুট গভীর একটি সাব-মার্সিবল পানির লাইন স্থাপন করেন সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মীরা। কয়েকদিন ঠান্ডা পানি উঠলেও কিছুদিন পরই ওই নলকূপ থেকে গরম পানি বের হতে শুরু হয়। গরম পানি থেকে রেহাই পেতে আরও দুটি নলকূপ বসানো হয়েছে। তবু পানির কোনো পরিবর্তন নেই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সমস্যা শুধু শফিউল আলমের বাড়িতে নয়। এই গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপ দিয়েই গরম পানি বের হয়।
মন্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রামের পানি অন্য এলাকার পানির মতো খেতে স্বাদ লাগে না। সাবানের পানির মতো অনেকটা পিচ্ছিল এবং গন্ধটাও অন্য রকম। তবে এ পানি দূষিত কি না তা জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কেউ এই এলাকায় গিয়ে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি।
আওয়ামীলীগ নেতা শফিউল আলম বাবু বলেন, ‘মন্ডলপাড়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে এই সমস্যা। ২৫ ফুটের বেশি গভীর হলেই নলকূপ বা পানির পাম্প থেকে গরম পানি বের হতে থাকে। ঠাণ্ডা পানি পাওয়ার আশায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ে ধর্না দিয়ে ৫৪৫ ফুট গভীর সাব-মার্সিবল পানির লাইন বসিয়েছি। তবু ঠাণ্ডা পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এই গভীর নলকূপ থেকে আরও বেশি গরম পানি বের হচ্ছে।’
স্থানীয় মুকুল, বদি ও আনজুয়ারা বলেন, একটি বা দুটি নয়, মন্ডলপাড়ার প্রায় ১২/১৩টির বেশি নলকূপ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গরম পানি উঠছে।
তারা আরও বলেন, ‘শফিউল আলমের বাড়ির গভীর পানির লাইন থেকে বের হওয়া পানি প্রথম এক মিনিট হাতে ছোঁয়া যায়। এরপরই ফুটন্ত গরম পানির মতো পানি বের হতে থাকে। হাতে বা শরীরে লাগালে অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়।’
মন্ডল পাড়ায় কত দিন থেকে গরম পানি আসছে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘যখন থেকে বুঝতে শিখি, তখন থেকে মন্ডলপাড়া গ্রামের টিউবওয়েল থেকে গরম পানি বের হতে দেখছি।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তা সরকার সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমি গরম পানি বের হওয়ার খবর শুনে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে জানিয়েছি। তিনি দ্রুত মাটি ও পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
রংপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ কুমার সাহা বলেন, ‘রংপুরে এটি নতুন সমস্যা। জিওলজিক্যাল সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। আমরা বিষয়টি গ্রাউন্ড ওয়াটার সার্কেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি দ্রুত সেখানে পরিদর্শনে যাবো।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্ববাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রাউন্ড ওয়াটার সার্কেল) সাইফুর রহমান বলেন, ‘রংপুরে নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার সংবাদটি আমি পেয়েছি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’
নদী বন্দর / পিকে