1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
দরজা খুলে টয়লেটে যাচ্ছে গরু - Nadibandar.com
সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১১৫ বার পঠিত

রেগে গিয়ে বোকা লোকজনকে আমরা অনেক সময় গরু বলে ডাকি। কিন্তু গরুকে যতটা বোকা মনে হয় তা কিন্তু নয়। তারা বেশ চালাক-চতুর। কোনো কিছু শেখালে চটপট শিখে নিতে পারে। মানবশিশুর থেকেও বেশি তাড়াতাড়ি অনেক কিছু আয়ত্ত করতে পারে তারা।

প্রয়োজন হলে দরজা খুলে টয়লেটেও যেতে পারে এই গবাদি প্রাণী। ক্ষেতখামারে যেখানে সেখানে মূত্র ও মলত্যাগ করে না। কাজ হয়ে গেলে বাথরুম অপরিষ্কার হয় সেটা ভালোই বোঝে। তাই মল-মূত্র ত্যাগের পর বাথরুম পরিষ্কার করার জন্য ফ্লাশ করতেও পারে তারা। এরপর কাজ শেষে স্বাভাবিকভাবে দরজা খুলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

সম্প্রতি এক গবেষণা থেকেই এমন তথ্য জানা গেছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পত্রিকা কারেন্ট বায়োলজিতে। যৌথভাবে এই গবেষণা চালিয়েছে, জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমেল বায়োলজি (এফবিএন)’ ও নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

চাষবাসের এলাকা বাড়ায় ক্ষেতখামারে গবাদি পশুদের ত্যাগ করা বর্জ্য পদার্থ থেকে উত্তরোত্তর বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। তৈরি হচ্ছে অত্যন্ত বিষাক্ত অ্যামোনিয়ার মতো গ্রিনহাউস গ্যাস। আর এর ফলে বাড়ছে উষ্ণায়নের বিপদ, যা দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত আগস্টে জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত রিপোর্টও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ক্ষেতখামারে গবাদি পশুর বর্জ্য পদার্থ থেকে কী ভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যায় তার উপায় বাতলাতে বলেছে বিজ্ঞানীদের।

অ্যামোনিয়া গ্যাস যে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হয়, তা কিন্তু নয়। কিন্তু গবাদি পশুর মাটিতে মেশা মল-মূত্র থেকে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়াকে ব্যাক্টেরিয়াসহ কয়েকটি অণুজীব বদলে দেয় নাইট্রাস অক্সাইডে। যা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের পর তৃতীয় বিপজ্জনক গ্রিনহাউস গ্যাস। চাষবাস থেকেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়া গ্যাসের নির্গমন হয়। যার অর্ধেকের জন্যই দায়ী গবাদি পশুদের মল-মূত্র।

গবেষকরা বহুপ্রচলিত তিনটি ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন। প্রথমত তারা দেখিয়েছেন, মল-মূত্র ত্যাগ করার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয় গবাদি পশুরা। ব্যাপারটা এমন নয় যে অপেক্ষা করতে না পেরে তারা হঠাৎই মল-মূত্র ত্যাগ করে ফেলে।

দ্বিতীয়ত, গবেষকরা দেখিয়েছেন বাথরুমে গিয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস রপ্ত করাতে চাইলে তারা সেটা খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। সদ্যোজাত মানবশিশু এমনকি দু’এক বছরের শিশুদের চেয়েও বেশি তাড়াতাড়ি এই অভ্যাসে রপ্ত করানো যায় ক্ষেতখামারের গবাদি পশুদের।

তৃতীয়ত, খাবারদাবারের উপহার পেলে মানবশিশুদের চেয়ে গবাদি পশুরা বেশি তাড়াতাড়ি এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠে। যা প্রমাণ করেছে মানবশিশুদের চেয়ে গবাদি পশুরা বেশি চালাক-চতুর।

 

অন্যতম গবেষক পশু মনোবিদ জান ল্যাংবিন বলেছেন, ক্ষেতখামারে গরু, মহিষের মতো গবাদি পশুদের যেখানে সেখানে মল-মূত্র ত্যাগের জন্য চাষের জমি ও তার ভেতরের নালাগুলো দূষিত হয়। আবার সেই গবাদি পশুরা যদি ক্ষেতখামারে শস্য রাখার আস্তানায় মল-মূত্রত্যাগ করে, তাতে সেগুলো দীর্ঘদিন সেখানে থাকতে থাকতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করে। যা একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। তাই গবাদি পশুদের টয়লেট ব্যবহারের অভ্যাস রপ্ত করিয়ে অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাতাসে কমিয়ে আনতে চেয়েছি আমরা।

এ ব্যাপারে গবাদি পশুদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন গবেষকরা। যে পদ্ধতির নাম ‘মুলু ট্রেনিং’। এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠার জন্য ক্ষেতখামারের গবাদি পশুদের প্রথমে লোভনীয় খাবারদাবারের টোপ দেওয়া হয়েছিল। তারপর শেখানো হয়েছিল মল-মূত্র ত্যাগের প্রাক মুহূর্তে কীভাবে দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকতে হবে। আর কীভাবে কাজ শেষ হয়ে গেলে বাথরুম পরিষ্কার রাখতে হবে।

 

ল্যাংবিন জানিয়েছেন, বাথরুম ব্যবহারের অভ্যাসে রপ্ত করানোর জন্য প্রাথমিক ভাবে গবাদি পশুদের জন্য কিছুটা কড়া শাস্তিরও ব্যবস্থা রেখেছিলেন গবেষকরা। বাথরুমের বাইরে মল-মূত্র ত্যাগ করলেই গবাদি পশুদের দেওয়া হতো কড়া শাস্তি। দীর্ঘক্ষণ খাবার বা পানি দেওয়া হতো। সামান্য কিছু শাস্তিও দেওয়া হতো।

গবেষকরা জানিয়েছেন কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণেই ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। ১৬টি গবাদি পশুর মধ্যে ১১টিই তিন সপ্তাহের মধ্যে টয়লেটে গিয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করা ও বাথরুম পরিষ্কার করার অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠে।

গবেষকদের আরও একটি ঘটনা বিস্মিত করেছে। তারা গবেষণায় দেখেছেন গবাদি পশুদেরও আত্মসম্মান বোধ আছে। একজন তাড়াতাড়ি বাথরুমে যাওয়ার অভ্যাসে রপ্ত হয়ে উঠছে দেখলে অন্যজন সেটা পারেনি বলে অস্বস্তি বোধ করে। চেষ্টা করে কতো তাড়াতাড়ি সেও এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

নদী বন্দর / সিএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com