ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের জায়গা সংকটের কারণে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাক গত ১৫ দিন ধরে বেনাপোল বন্দরসহ আশপাশের প্রধান সড়ক এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে এ বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের চেকপোস্ট রপ্তানি গেট থেকে বেনাপোলের আমড়াখালী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক যানজটে এলাকাবাসীসহ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ভারত প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ৩০০ থেকে ৩৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বরাবরই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভারত আগে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক গ্রহণ করলেও বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ ট্রাক গ্রহণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও প্রশাসনের কোনো কর্তাব্যক্তিকে তা নিরসনে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে রিকশা-ভ্যানও যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। অনেকে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, রোগী, নারী ও শিশুদের কষ্টের অন্ত নেই। এমন অবস্থায় বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন সভা করে ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে রপ্তানি বাণিজ্য রাত ১১টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র পণ্যবোঝাই এক হাজারের বেশি ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। জায়গা না থাকায় ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন পণ্য নিয়ে যত ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে যায়, সেগুলোর স্থান সংকুলান করতে পারছে না সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ, সেখানেও পণ্য নিয়ে বাংলাদেশমুখী প্রায় ৯০০ ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
বেনাপোল ট্রাক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনের ভুসি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং গার্মেন্টস, সাবান, ব্যাটারি, গার্মেন্টস ঝুট ভারতে রফতানি হচ্ছে। প্রতিদিন এসব পণ্য নিয়ে ২০০-২৫০ ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দরে যেতে না পারায় বেনাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্যের ট্রাক রাখার কোনো টার্মিনাল নেই।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। ফলে প্রতিদিন এসব পণ্য বোঝাই প্রায় ২৫০টি ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন নিচ্ছে মাত্র ১০০ ট্রাক। এ কারণেই এত ট্রাক বেনাপোলে আটকে থাকছে। ফলে বাড়ছে ভোগান্তি। এখন যে পরিমাণ যানজট হয়েছে মানুষজন চলাচল, বেনাপোল বাজার, বন্দর কাস্টমস এলাকাসহ সমস্ত এলাকা এক্সপোর্টের গাড়িতে ভরে গেছে। ভারতের পাশে কাস্টমস, বিএসএফ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। বিষয়গুলো নিয়ে জরুরি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে আমদানি পণ্যের পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন প্রায় এক হাজার থেকে ১২০০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে অবস্থান করছে। এতে বন্দর এলাকায় আমদানি-রফতানি পণ্য খালাসে ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, রফতানি বাণিজ্য আরও গতিশীল করতে সম্প্রতি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয় এবং তারা প্রতিদিন সকল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শতাধিক রপ্তানি পণ্যের ট্রাক নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। যাতে দ্রুত এক্সপোর্টের গাড়িগুলো ভারতে পাঠানো যায় সে লক্ষে কাজ করছি।
নদী বন্দর / সিএফ